তারুণ্যের উৎসবে আনন্দে মাতোয়ারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা
প্রকাশিতঃ 10:02 pm | January 16, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতাজনিত অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা। বৈশিষ্ট্যগতভাবে প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব শিশুদের সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এক অন্যরকম হাসি-উল্লাসের মধ্যে দিয়ে নিজেদের দিনটি অতিবাহিত করেছে তাঁরা। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে উৎসবটিতে ক্ষণে ক্ষণেই এসব শিশুদের মাঝে ফুটেছে হাসির ফোয়ারা। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কামরুল আহসান তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে এমন সব শিশুদের অংশগ্রহণে এই ক্রীড়া উৎসবের উদ্বোধন করেন।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরের স্বাধীনতা উদ্যান। প্রথম দেখায় কোন অবস্থাতেই বুঝার ওপায় নেই এদের কেউ কানে শোনে না, কেউ কথা বলতে পারেন না, আবার কারও স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি। কোন কোন শিশু আবার ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। কিন্তু এদিনটিতে তাঁরাই মেতে ওঠে উচ্ছ্বাস-আনন্দে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নানান খেলা দেখতে সেখানে উপস্থিত হন স্থানীয় সাধারণ মানুষও। খেলায় ঘটে যাওয়া নানা কাণ্ড আনন্দ যোগায় উপস্থিত সব বয়সীদের মধ্যে। কখনও কখনও হাসিতে ফেটে পড়েন সবাই।
এ সময় বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া অফিসার হুসাইন আহমাদ, জেলা শিশু কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, জেলা প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা শামীম আহসানসহ বিভিন্ন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। তারুণ্যের উৎসবে অনুষ্ঠিত ক্রীড়া উৎসবে জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি শিশুকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
দেখা যায়, উদ্বোধনের পরেই শিশুরা মেতে ওঠে নাচ, গান ও বিভিন্ন খেলাধুলায়। সামাজিক আচরণে দুর্বল শিশুরা বাসকেট বল, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, বেলুন ফাটানো, ঝুড়ির মধ্যে বল ফেলা, চকলেট দৌড়সহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করে। নাচ ও গান পরিবেশন করে অনেক শিক্ষার্থীরা। ব্যতিক্রমী এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি পিছিয়ে পড়া শিশু ও তাদের অভিভাবকরা।
নুশরাত জাহান মীম নামে এক অটিস্টিক শিশুর মা মুসলিমা জাহান বলেন, ‘একজন মা-ই জানে তার অসুস্থ শিশু থাকা কতটা কষ্টের। তারপরও সন্তানকে ভালো রাখতে চাই। অনেকদিন পরে আজকে ভালো একটি উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার মেয়েটা খুবই খুশি।’ সজিব নামে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু সজিব বলেন, ‘এখানে এসে গান গাইলাম। অনেকদিন পরে অনেক মানুষ একসঙ্গে খেলাধুলা করলাম খুবই ভালো লাগল।’
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে বাগেরহাট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি রেখে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বীপানিতা পাল বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে অটিস্টিক শিশুদের উন্নয়নে অনেক ধরনের কাজ হচ্ছে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অটিস্টিক শিশু ও ব্যক্তিদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের সামাজিক করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করি। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক পরিবেশের সঙ্গে এসব শিশুকে আত্মস্থ করা, আত্মসচেতনতাবোধ জাগানো, সামাজিক করে গড়ে তোলা,ব্যক্তিগত ভাববিনিময়, পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে তার সামঞ্জস্য সৃষ্টি প্রথম পর্যায়ে এসবই শেখানো হয়। জেলা প্রশাসনের এমন আয়োজন এসব শিশুদের উৎসাহিত করবে। ভবিষ্যতেও এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওদেরকে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া অফিসার হুসাইন আহমাদ বলেন, জেলায় অনুষ্ঠিত ক্রীড়া উৎসবে যারা ভালো করবে তাদের ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে এবং প্যারা অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হবে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অটিস্টিক আহমেদ কামরুল আহসান বলেন, নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের এগিয়ে নিতে হবে। শিশুদের এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে পৃথিবী বদলে যাবে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
কালের আলো/আরআই/এমএইচ