জাতীয় ঐক্য হচ্ছে একটি জাতির মেরুদণ্ড : জর্জ বিনিময় রায়

প্রকাশিতঃ 6:50 pm | January 17, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতীয় ঐক্য হচ্ছে একটি জাতির মেরুদণ্ড এমন মন্তব্য করেছেন সেন্ট থমাস চার্চ-এর সিনিয়র ব‍্যক্তিত্ব জর্জ বিনিময় রায়। তিনি বলেছেন, ‘একটি জাতির মধ্যে ঐক্য থাকলে তারা যে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে একতা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আজকে যে আমরা সভ্যতার ওপর দাঁড়িয়ে আছি সেটা এনে দিয়েছে একতা। আমরা যদি এক থাকি আমাদের নিরাপত্তা থাকবে। নিজেদের মধ্যে একতা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমাদের কর্তব্য হলো নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ঐক্য নিশ্চিতে নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের অবদান রাখা। ’

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মগবাজার সেন্ট থমাস চার্চে ইক‍্যুমেনিকেল খ্রিস্টান ট্রাস্ট (ইসিটি) এবং সেন্ট থমাস চার্চ-এর যৌথ উদ্যোগে ‘নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইক‍্যুমেনিকেল খ্রিস্টান ট্রাস্ট’র (ইসিটি) চেয়ারম্যান রেভা: ইম্মানুয়েল মল্লিক। এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ, ইসিটি বোর্ড’র সদস্য বিশপ সাইমন বাড়ৈ, ইসিটির ট্রেজারার জন সুশান্ত বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের শুরুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস (সেক্রেটারি, ইক‍্যুমেনিকেল খ্রিস্টান ট্রাস্ট) মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেন্ট থমাস চার্চের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব জর্জ বিনিময় রায় বলেন, ‌’নিরাপত্তা আমাদের দেহকে রক্ষা করে। নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। এসব নিরাপত্তার দায় বর্তায় আমাদের সরকারের ওপর। আমাদের মূল নিরাপত্তাগুলো হচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের একটা বন্ধনে আবদ্ধ করে। সব ধর্মেরই নিজস্ব কিছু বিশ্বাস আছে। সম্প্রীতি হলো সবাই সবার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চয়তা। সেটা নিশ্চিত করেন আমাদের সরকার। কোনো একটা বিশেষ ধর্মকে গুরুত্ব দিলে সেটা বিনষ্ট হয়।’

সভাপতির বক্তব্যে রেভারেন্ড ইম্মানুয়েল মল্লিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘সম্প্রীতি ও ঐক্য রক্ষায় আমাদের সকলের পাশাপাশি মিডিয়ারও গুরুত্ব রয়েছে। আমরা বিগত আন্দোলনে মিডিয়ার ভূমিকা দেখেছি।’

অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সেনাবাহিনী হচ্ছে নিরপেক্ষ একটা শক্তি। কেউ যদি নিরপেক্ষ থাকে সেখানে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। আমাদের ছাত্রদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে তারাও ঐক্যের প্রতীক হতে পারে সেটা তারা বিগত আন্দোলনে দেখিয়ে দিয়েছে। বাস্তবিক অর্থে ঐক্য ঠিক করতে হলে সামাজিক ন্যায়বিচার অত্যন্ত জরুরি। আগামীর পৃথিবীকে সুন্দরভাবে সাজাতে হলে সামাজিক, ধর্মীয় সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্য জরুরি। ’

ইসিটি ট্রেজারার জন সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘৫ আগস্ট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত দেশকে রক্ষা করেছে। দেশ দাঁড়িয়ে আছে তিনটি পিলারের ওপর; সেটা হলো জনগণ, সরকার ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সঠিক সিদ্ধান্ত আমাদের দেশকে পথ হারাতে দেয়নি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। তারাহুড়ো করে আমরা দেশকে আরেকটি ফ্যাসিস্ট এর হাতে তুলে দিতে চাই না। ’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রীতি মানে হলো একে অন্যের সাথে মিলেমিশে থাকা। সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য ঐক্যের প্রয়োজন আছে। ’

সাংবাদিক সুজাউল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী ধর্মীয় সংখ্যালঘু নামে একটা বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বলতে কিছু নাই। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা একতাবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব।’

দৈনিক খবরের কাগজের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ অন্যায় অত্যাচার জুলুমের শিকার একটি জাতিকে ছাত্র-জনতার এক অভ্যত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। পরাজিত শক্তি ঐক্য বিনষ্ট করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্নভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার সবরকম চেষ্টা করছে। তারা ধর্মকে পুঁজি করে তাদের দেশে এবং বিদেশের দোসরদের নিয়ে সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে। আমাদের জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই চেষ্টাকে মোকাবিলা করতে হবে।’

কালের আলো/এএইচ/এমকে