বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৪.১ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিতঃ 12:51 pm | January 18, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। গত জুন মাসে সংস্থাটি বলেছিল, এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগে একই ধরনের তথ্য দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমে গেছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা। এমন পরিস্থিতি এবং নীতি অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক অর্থনীতির গতি দুর্বল হওয়ার কারণ হিসেবে আরও সমস্যার কথা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, দেশে জ্বালানি ঘাটতিসহ সরবরাহসংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এবং আমদানিতে বিধিনিষেধ শিল্প কার্যক্রমকে দুর্বল করেছে। চাপ বেড়েছে মূল্যস্ফীতির। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে মন্থর হয়ে গেছে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি। দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমে এলেও বাংলাদেশে তা উচ্চ পর্যায়ে স্থির রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও সংকোচনমূলক করা হয়েছে মুদ্রানীতি। তবে চলতি বছরও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হতে পারে। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লেও বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে তা কমেছে। এটি মুদ্রাবাজার চাপে থাকার প্রতিফলন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোসহ বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে গেলে তা রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবেচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ। আর দেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই হয় ইউরোপে।

শুক্রবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কারণে এ বছর গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমাতে হয়েছে। কারণ, অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়ানো হলেও কমানো হয়েছে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের নীতি অনিশ্চয়তা এর বড় কারণ। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্প কার্যক্রম নিকট ভবিষ্যতে মন্থর থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ফের বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। রাজনৈতিক স্থিতশীলতা ফিরে আসার পাশাপাশি আর্থিক খাতের সংস্কার সফল হলে, ব্যবসা পরিবেশের উন্নতি হলে ও বাণিজ্য বাড়লেই এটি সম্ভব হবে। মূল্যস্ফীতি কমে এলে সেটিও বেসরকারি ভোগ্যব্যয় বাড়াতে সহায়তা করবে।

তবে আগামী অর্থবছরেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি দুর্বল অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বেকারত্ব এখনও উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশে এটি বেড়েছে।

এর আগে, গত মাসে আইএমএফ বলেছিল, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে। এর আগে গত অক্টোবরে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ দেয় সংস্থাটি। এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তার প্রথম বাজেট বক্তৃতায় এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন।

 

কালের আলো/এসএকে