‘ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে’
প্রকাশিতঃ 6:01 pm | January 18, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
পর পর তিনটি অসম্ভব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনগুলোকে (গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান) ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেল (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন রকমের জবাবদিহিতা বা জনগণের কাছে দায়দ্ধতা দেখা যায়নি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বিআইসিসির কার্নিভাল হলে ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি-২০২৪’ আয়োজিত ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. সেলিম রায়হান এসব কথা বলেন।
সিপিডি’র সম্মাননয়ীয় ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রমুখ।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, গত দেড় দশক ধরে রাজনৈতিক অর্থনীতির সমস্যাগুলো দেখছি। তবে এটা গত ৫ দশকের অধিক সময় ধরেই ছিল। দেড় দশকে সমস্যা গুলো অনেক জটিল হয়েছে, অনেক গভীর হয়েছে। নতুন করে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিগত সরকারে আমলে গুটিকয়েক ব্যবসায়ীগোষ্ঠী রাষ্ট্র দখল করেছিল।
তিনি আরও বলেন, একইগ্রুপ যারা ব্যাংক ঋণখেলাপী, আবার একই গ্রুপ যারা কর খেলাপী। অন্যদিকে নানাভাবে একই গ্রুপ টাকা পাচার করছে। এই আন্ত:সংযোগটা একদম নতুন। আমরা ক্রনি ক্যাপিটালিজমের আধিপত্য দেখেছি, বড় ব্যবসায়ীদের দেখেছি রাষ্ট দখল করতে। যারা নানাভাবে সুবিধা আদায় করেছে, নীতিমালায় প্রভাব বিস্তার করেছে। একই সময়ে তারা বিজনেস এসোসিয়েশনের লীডারশিপও দখল করে নিয়েছিল। যখনই কোন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখনই তারা বাধা দিয়েছে।
শ্বেতপত্রের প্রকাশের পর যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এমন প্রশ্ন তুলে ড. সেলিম রায়হান বলেন, শ্বেতপত্র নিয়ে সরকারের কার্যক্রম নেই। শ্বেতপত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৭টি মেগা প্রজেক্ট রিভিউ করতে গিয়ে দেখা গেছে, ১৮ হাজার টাকার বাজেট ১৮ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। এসব প্রজেক্ট ঋণের টাকায় করা হয়েছে। এসবের ঋণের চাপ আমাদের ও আগামী প্রজন্মের ওপর পড়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন চ্যানেলে যেসব টাকা পাচার হয়েছে, সেগুলো কীভাবে ফেরত আনা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। বিদেশের যেসব টাকা দেশে ঢুকেছিল, সেগুলো যেভাবে ফেরত নেওয়া হয়েছে, সেই আলোকে আমরাও ফেরত আনতে পারবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, সরকারের প্রত্যেক কর্মকর্তার মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব রয়েছে। কেননা, তাদেরকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যে কারণে তারা এসব কাজ করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন করতে পারবেন।
অন্তর্বর্তী সরকার কি আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন করতে পারবে- ড. দেবপ্রিয়র এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তো অস্থায়ী সরকার। তাদের কাছ থেকে খুব বেশি এক্সপ্যাক্ট করতে পারি না। কিন্তু কিছু পরিবর্তনের সূচনা আমরা আশা করতে পারি।
তিনি বলেন, গত সরকারে সময় অর্থ লুন্ঠনের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে। এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। কোন কিছুপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে নয়, উপরের আদেশে হয়। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পুনরুদ্ধার করতে হবে। কিন্তু পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় সরকারের খুব শক্তিশালী অবস্থান দেখছি না।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বিগত সরকারের চৌর্যভিত্তিক প্রকল্প ছিল। মানুষের কল্যাণে কাজ হয়নি। পাচার টাকা ফেরত আনলে শাস্তি কম দেওয়া হবে-এমন কিছু করা যায়। সঠিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা না বলায় বর্তমান সরকারের কাজে গতি নেই।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, আমলা ও ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনার মতো শক্তি কী সরকারের আছে? আর তা করতে হলে কী করা দরকার, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। যেসব দেশ পাচারের টাকা ফিরিয়ে এনেছে তাদের পলিসিগুলো আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
কালের আলো/এমডিএইচ