ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ৬৮ হাজার গ্রামেই পল্লী উন্নয়ন সেবা ছড়িয়ে দিতে চান চেয়ারম্যান

প্রকাশিতঃ 11:00 pm | January 18, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

মাত্র ক’দিন আগে ইসলামী ব্যাংককে দেশের এক নম্বর ব্যাংক হিসেবে অভিহিত করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এই ব্যাংকটিকে বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। প্রকৃত অর্থেই দেশের প্রথম শরিয়াহ-ভিত্তিক এই ব্যাংকটি ৪১ বছর ধরে সব রকমের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।

নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ’র দিন-রাত একাকার পরিশ্রম, দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংক প্রায় ৯ লাখ নতুন গ্রাহক এবং ১৩ হাজার কোটি টাকা নতুন ডিপোজিট সংগ্রহ করেছে। রেমিট্যান্স আহরণেও দখল করেছে শীর্ষস্থান। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে গ্রাহকের। ব্যাংকটির বর্তমান আমানত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি। স্পর্শ করেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের মাইলফলকও।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দু’দিন ব্যাপী ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ নিজেও ইসলামী ব্যাংককে দেশের এক নম্বর ব্যাংক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি দেশের ৬৮ হাজার গ্রামেই পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানান। বর্তমানে এই প্রকল্পটি দেশের ৩৪ হাজার গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমুখী ব্যাংকিং সেবা গ্রহণেও তিনি উৎসাহিত করেন। এদিন তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম মাসুদ রহমান, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল এবং শরী‘আহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্যসচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ওমর ফারুক খান। ধন্যবাদ জানান অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আলতাফ হুসাইন। উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার।

  • ইসলামী ব্যাংকের ৪০০ শাখা, সেবা দিচ্ছে আড়াই কোটি গ্রাহককে
  • আড়াই কোটি গ্রাহক আর বিস্তৃত নেটওয়ার্কই প্রমাণ করে ইসলামী ব্যাংকের জনপ্রিয়তা
  • নানান চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেও ইসলামী ব্যাংক ব্যবসায়িক সূচকে শীর্ষে

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই ব্যাংকের কর্মীরা অত্যন্ত সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। একই ছাদের নিচে এতো সৎ ও দক্ষ মানুষের সমাবেশ কোথাও নেই। তারা রেমিট্যান্স আহরণ, বিনিয়োগ ও আমানতের অগ্রগতি অর্জনের জন্য দিকনির্দেশনা দেন। ইসলামী ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতেও সবার প্রতি আহ্বান জানান।

ইসলামী ব্যাংকের ৪০০ শাখা, সেবা দিচ্ছে আড়াই কোটি গ্রাহককে
ইসলামী ব্যাংকের আমানত বর্তমানে ব্যাংকের ২ দিনব্যাপী ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে ৪০০টি শাখা রয়েছে। এছাড়া ২৬৫টি উপশাখা, ২৭৮৩টি এজেন্ট আউটলেট, ৩ হাজার ৪০টি এটিএম বা সিআরএম বুথের মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। গত বছরই ব্যাংকটি ১ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ২০২৪ সালে এই ব্যাংক ৬৪ হাজার ৭৮২ কোটি আমদানি, ৩২ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা রপ্তানি ও ৬৬ হাজার ১৭ কোটি টাকা রেমিট্যান্স আহরণ করেছে। ডিজিটাল ওয়ালেট সেলফিন অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ। ৩৪ হাজার গ্রামের ১৮ লক্ষাধিক পরিবারকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ দিয়েছে এই ব্যাংক।

আড়াই কোটি গ্রাহক আর বিস্তৃত নেটওয়ার্কই প্রমাণ করে ইসলামী ব্যাংকের জনপ্রিয়তা
দু’দিন ব্যাপী ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক দেশের এক নম্বর ব্যাংক এবং জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ এই ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ৬ হাজার ৫০০ ইউনিটের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক দেশজুড়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহক আর এ বিস্তৃত নেটওয়ার্কই প্রমাণ করে এই ব্যাংকের জনপ্রিয়তা।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ৩৪ হাজার গ্রামে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংক। আমরা এই সেবা দেশের ৬৮ হাজার গ্রামেই ছড়িয়ে দিতে চাই। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর এ ব্যাংক প্রায় ৯ লাখ নতুন গ্রাহক এবং ১৩ হাজার কোটি টাকা নতুন ডিপোজিট সংগ্রহ করেছে। বিগত বছরেই ব্যাংক ৪০০তম শাখা উদ্বোধনের মাইলফলক অর্জন করেছে।’

নানান চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেও ইসলামী ব্যাংক ব্যবসায়িক সূচকে শীর্ষে
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকের অবদান অবিস্মরণীয় বলে মনে করেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে নানান চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেও ইসলামী ব্যাংক সব ব্যবসায়িক সূচকে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি ডিপোজিট সংগ্রহ করেছে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯ ভাগ এই ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা এই ব্যাংকে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের মোট রেমিট্যান্সের এক চতুর্থাংশ। এই ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

এই সম্মেলনে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহমুদুর রহমান, মো. রফিকুল ইসলাম, মুহাম্মাদ সাঈদ উল্লাহ, কে এম মুনিরুল আলম আল-মামুন, ড. এম কামাল উদ্দীন জসীম ও মো. মাকসুদুর রহমান এবং প্রধান কার্যালয়ের উইং ও ডিভিশনের প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা, ১৬টি জোনের জোনপ্রধান ও ৮টি করপোরেট শাখাসহ ৪০০টি শাখার ব্যবস্থাপকরা অংশগ্রহণ করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে