কে এম শফিউল্লাহ’র বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী’র

প্রকাশিতঃ 1:17 pm | March 17, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা অমুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকার’, মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব:) কে এম শফিউল্লাহ’র এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক।

একই সঙ্গে কে এম শফিউল্লাহকে এমন মনগড়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। শনিবার (১৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে জনপ্রিয় গণমাধ্যম কালের আলো’র সঙ্গে মোবাইল আলাপে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কে এম শফিউল্লাহ জাতীয় প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় কাপুরুষের মতো বক্তব্য দিয়েছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেন আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সংগঠক বলেন, ‘কে এম শফিউল্লাহ সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন।

আরো পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা অমুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকার : কে এম শফিউল্লাহ

সেনাবাহিনীতে তাঁর সময়ে বিশৃঙ্খলার সময় কিছুই করতে পারেননি। এখন লম্বা লম্বা কথা বলছেন। তাঁর মতো দায়িত্বশীল লোকের কাছ থেকে জাতি মনগড়া বক্তব্য প্রত্যাশা করে না। মন্ত্রণালয়ের কারা কারা রাজাকার এবং অমুক্তিযোদ্ধা সেই সম্পর্কে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি না বলে ঢালাও অভিযোগ তুলছেন।’

তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা পোড় খাওয়া এই রাজনীতিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তাঁর সময়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে ২০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮২ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। ভারতীয় তালিকা, মুবিজনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী শিল্প অভিনেতাসহ যারা ওই সময় কর্মরতদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

প্রতি এলাকায় সেখানকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা টানিয়ে রাখার ব্যবস্থা করার কথা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। ওইদিন সংসদে তিনি জানান, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনে চলতি অর্থবছরে ২ হাজার ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

অচিরেই এই প্রকল্প একনেকে উত্থাপন করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের এসব বাড়ির নাম রাখা হয়েছে ‘বীর নিবাস’। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। আগামী বাজেটে এ জন্য ৪ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তাদের পৃথক পরিচয়পত্র দেওয়ারও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে, জানান মন্ত্রী।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এমন সব ইতিবাচক সাফল্যের পরেও শনিবার (১৬ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা আয়োজিত ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও তাদের মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন সম্মান দেন না। এছাড়া বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা অমুক্তিযোদ্ধা এবং অনেকেই রাজাকার। তারা তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলবে না। আমরা তো তাকিয়ে থাকি মন্ত্রণালয়ের দিকে। তারা যদি আমাদের কথা না শোনে তাহলে একটা সংগঠন করে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হবে।

সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ’র এমন বক্তব্যে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি। তাঁর এই মনগড়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে কে রাজাকার আর কে অমুক্তিযোদ্ধা এই বিষয়টি তাঁর স্পষ্টভাবে বলা উচিত ছিলো।

হুম কিছু রাজাকার থাকতে পারে। কারণ আল্লাহ’র ওহি যেহেতু আমাদের কাছে আসে নাই। আমরা জানি না কে মুক্তিযোদ্ধা, কে রাজাকার। এর কারণ সব মানুষ তো আমার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করে নাই। তিনি সেনাপ্রধান (কে এম শফিউল্লাহ) ছিলেন। দায়িত্বশীল একজন মানুষ হওয়ায় তাঁর এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।

কালের আলো/এমএইচ/এএ