শপথের পর যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প
প্রকাশিতঃ 2:26 pm | January 21, 2025
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
মার্কিন মসনদে বসেই নির্বাহী আদেশের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর ওভাল অফিসে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।
স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল রোটুন্ডায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন ট্রাম্প। এরপর ওভাল অফিসে ফিরে শুরুতেই বাতিল করেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ। এরমধ্যে আছে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরাইলিদের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণাসহ একাধিক আদেশে সই করেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেছেন তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি
ক্ষমতা গ্রহণের আগে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে যে ‘লাখ লাখ অপরাধী’ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে, তারা যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ফেরত পাঠানোর হুমিক দিয়েছেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি এ সম্পর্কিত এক নির্বাহী আদেশে সই করেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে বা শিক্ষা-পর্যটনসহ সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্ম দিলে সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। তবে বাবা-মায়ের কেউ আমেরিকান নাগরিক হলে সন্তান জন্মের পরই মার্কিন নাগরিক বলে স্বীকৃতি পাবে।
আদেশে সই করার সময় ট্রাম্প স্বীকার করেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার যেহেতু দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে, এই কারণে তার এই আদেশ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
তিনি জানান, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব একেবারে হাস্যকর এবং তার বিশ্বাস এই বিধান বদলানোর জন্য ভালো আইনগত যুক্তি আছে।
বাইডেন আমলের নির্বাহী আদেশ বাতিল
শপথ গ্রহণের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিল করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ওয়ান অ্যারেনার মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণে ট্রাম্প বলেন, শিগগিরই বাইডেন আমলের সব নির্বাহী আদেশ বাতিল করবেন তিনি।
তার কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তার মধ্যে শুরুতেই তিনি বাইডেন আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিল করেন। স্থগিতাদেশে সই করার পর ট্রাম্প জনতার উদ্দেশ্যে সেটি তুলে ধরে দেখান।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আদেশে সই
জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে গৃহীত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার কয়েকঘণ্টা পরই এই সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।
ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশে সইয়ের মাধ্যমে গত এক দশকের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্বন নির্গমনকারী দেশটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে সরকারগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই এর সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প।
ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় জড়িত ১,৬০০ জনকে সাধারণ ক্ষমা
ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া প্রায় ১ হাজার ৬০০ মানুষকে ক্ষমা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায় ট্রাম্পের সমর্থক একদল মানুষ। ডোনাল্ড ট্রাম্পপন্থি বিক্ষোভকারীদের কংগ্রেস ভবনে ওই হামলার ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।
ডেমক্র্যাটরা ওই হামলায় উসকানি দেয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের উদ্যোগ নিয়েছিল। পরে সিনেটে দুই তৃতীয়াংশ ভোট না থাকায় ট্রাম্প শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্বাহী আদেশে সই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করার প্রক্রিয়া শুরু করা সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে ওই আদেশে সই করার সময় তিনি বলনে, ‘ওহ! এটি বড় একটি সিদ্ধান্ত।’
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তখনই তিনি এ প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
এই নির্বাহী আদেশটি যেহেতু ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাই এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক পুনরায় চালু রাখতে এবং পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরাইলিদের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন।
কালের আলো/এএএন/কেএ