খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই বলছে পুলিশ, স্বজনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিতঃ 9:46 am | March 18, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন কর্মকারের (৩৯) মৃত্যু হয়েছে। তিনি খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাতা। রাজনের স্বজন ও সহকর্মীরা তাঁর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক দাবি করেছেন। লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে পুলিশের কাছেও।

ময়না তদন্তের পর এটি হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম। তবে রোববার (১৭ মার্চ) রাজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এই নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

আরো পড়ুন: খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার অকাল মৃত্যু নিয়ে এতো ‘জলঘোলা’র নেপথ্যে কী?

নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে তৃণমূলের রাজনীতি থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে বিতর্কিত করতেই একটি মহল এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে বলেও প্রচারণা রয়েছে।

তাদের ভাষ্য মতে, ওই মহলটিই রাজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে লম্ফঝম্ফ করছে। মন্ত্রীর পরিবারকে বিপাকে ফেলতেই কায়দা করে তাঁরা কোন বিশেষ চক্রের প্ররোচনায় এমন অভিযোগ তোলছেন কীনা এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। তবে পুলিশ নিরপেক্ষভাবেই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানিয়েছে।

জানা যায়, গত শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে একটি অপারেশন শেষ করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় ফিরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন কর্মকার।

ওইদিন ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে তাকে তার পরিবারের লোকজন স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজন কর্মকার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অষ্টম ব্যাচের (বিডিএস) ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের এখলাসপুর। তার বাবার নাম সুনীল কর্মকার। হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন চিকিৎসক।

শেরে বাংলা নগর থানা’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ স্কয়ার হাসপাতাল থেকে জানান, রাজনকে হাসপাতাল চিকিৎসক ভোর ৪টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা কাগজপত্র আমরা দেখেছি। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

তার শরীরে কোনো আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। ময়না তদন্তের জন্য রাজনের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

প্রয়াত ডা. রাজন কর্মকারের স্ত্রী ডা. কৃষ্ণা রানী মজুমদার নিজেও একজন চিকিৎসক। তিনি বিএসএমএমইউ এর সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে রাজন ইন্দিরা রোডের ৪৭ নম্বর হাশেম বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।

নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রায়ই স্ত্রী কৃষ্ণার সঙ্গে রাজনের ঝগড়াঝাটি হতো। কিন্তু এরপরও দু’জন একসঙ্গেই এক ছাদের নিচে থেকেছেন।

এদিকে, এই ঘটনায় রাজনের মামা সুজন কর্মকার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে তিনি তার বোনের কাছ থেকে জানতে পারেন তার ভাগিনা মারা গেছে। পরে তিনি রাজনের ইন্দিরা রোডের বাসায় যান।

বাসার নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন রাত সাড়ে ৩টার দিকে কৃষ্ণা তার স্বামী রাজনকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেছে। পরে স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এজাহারে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, তার ভাগিনার মৃত্যু স্বাভাবিক না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়–য়া জানান, চিকিৎসক রাজনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। তিনি ও তার স্ত্রী কৃষ্ণা মজুমদার আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক। তবে রাজনের কি কারণে মৃত্যু হয়েছে তা জানতে পারিনি।

ডা: কৃষ্ণা মজুমদারের পারিবারিক একটি সূত্রের অভিযোগ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঝগড়া বিবাদকে পুঁজি করে একটি মহল বিশেষ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাজনের পরিবারকে দিয়ে মনগড়া অভিযোগ দায়ের করেছেন। যেখানে পুলিশ নিজেও বলছে রাজনের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই।

এরপরেও তারা মন্ত্রীর পরিবারকে বিপাকে ফেলতেই হীন ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। এর পেছনে মন্ত্রীর প্রতিপক্ষ কোন রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন রয়েছে কীনা এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার। অন্যান্য বিষয়াদির সঙ্গে এই বিষয়টিও পুলিশ তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী।

কালের আলোকে তিনি বলেন, ডা: রাজনের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। আমরা নিজেরাও অসংলগ্ন কিছু পাইনি এখন পর্যন্ত। তবে পেপার-পত্রিকা ও টিভিতে বিভিন্ন রকমের সংবাদ দেখছি। রাজনের মামার অভিযোগে এই মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলা হয়েছে।

ওসি বলেন, তিনি (রাজনের মামা) রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আপাতত তদন্ত ছাড়া আমরা কিছুই বলতে পারবো না। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পাওয়া গেলে পুরো বিষয়টি খোলাসা হবে।

ওসি আরো জানান, রাজনের বাবা-মা বা স্ত্রী’র সঙ্গে আমরা এখনো কথা বলতে পারিনি। হাসপাতালে যারা উপস্থিত ছিলো এবং রাজনের সহকর্মীরা এই মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ তুলছে। ময়না তদন্ত রিপোর্টের পর জানা যাবে এটি হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু।

কালের আলো/এমএস/ওএইচ