দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসারে বছরে ৪৯৭১ জনের মৃত্যু
প্রকাশিতঃ 8:04 pm | January 21, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার। এই দুই ক্যানসারে প্রতি বছর ১১ হাজার ৭৫৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে জরায়ু-মুখ ক্যানসারে ৪ হাজার ৯৭১ জন এবং ৬ হাজার ৭৮৩ জন স্তন ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সচেতনা বৃদ্ধি, নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং টিকাদান কর্মসূচি জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ১৯ থেকে ২৫ জানুয়ারি ‘জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে সচেতনামূলক র্যালি ও বহির্বিভাগে দুইটি মাসব্যাপী সচেতনতা সেবাবুথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা জানান, বিশ্বে নারীদের যত ধরনের ক্যানসার হয় তার মধ্যে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার অন্যতম। জরায়ু-মুখ ক্যানসার বিশ্বজুড়ে ক্যানসারের মধ্যে চতুর্থতম এবং ক্যানসারজনিত মৃত্যুর চতুর্থ শীর্ষ কারণ। এছাড়া, স্তন ক্যানসার বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে উভয় ক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানীয় ক্যানসার। বাংলাদেশে নারীদের মৃত্যুর প্রধানতম দুটি কারণ হলো জরায়ু-মুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার। এই দুটি ক্যানসার গুরুত্বপূর্ণ নন-কমিউনিকেবল ডিজিসেস হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুনভাবে প্রায় ৮ হাজার ২৬৮ জন নারী জরায়ু-মুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং ৪ হাজার ৯৭১ জন নারী মারা যান। একইভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুনভাবে প্রায় ১৩ হাজার ২৮ জন নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং ৬ হাজার ৭৮৩ জন মারা যান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকা অনেকাংশে নির্ভর করে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও কার্যকরী চিকিৎসা প্রদানের ওপর। দেরিতে রোগ শনাক্তকরণ হলে সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেওয়া কঠিন বিধায় মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই এসব রোগের চিকিৎসা সুবিধা সীমিত ও ব্যয়বহুল। প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে মৃত্যু সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
তারা আরও বলেন, নারীদের মধ্যে প্রতিবছর নতুনভাবে জরায়ু-মুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হার যথাক্রমে প্রতি লাখে ১২ ও ১৯ জন। এছাড়া, অন্তত ২-৩ শতাংশ ত্রিশোর্ধ্ব নারী ক্যানসারপূর্ব অবস্থায় আছেন। বর্তমানে ত্রিশোর্ধ্ব নারী রয়েছেন প্রায় ৩ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার জন। এ হিসাবে বাংলাদেশে অন্তত ৬ লাখ ৫৫ হাজার থেকে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ জন নারী ক্যানসারপূর্ব বা ক্যানসার অবস্থায় আছেন। জরায়ু-মুখ ক্যানসারর কমানোর জন্য ক্যানসার পূর্বাবস্থায় থাকা নারীদের খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাতীয় পর্যায়ে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সাল থেকে মহিলাদের জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানাসরের মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। সারাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি সেবা কেন্দ্রে (বিএসএমএমইউ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ও হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) বিনামূল্যে জরায়ু-মুখ এবং স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংসেবা চালু করা গেছে। এছাড়াও, সরকার দেশের ৩৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিএসএমএমইউ-এ জরায়ু-মুখ ক্যানসার নিশ্চিতরূপে নির্ণয়ের নির্ণয়ের জন্য কল্পোস্কোপি পরীক্ষা ও এ সংক্রান্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।
এছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলায় তিন থেকে চারটি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ত্রিনিং ও এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করছেন। জরায়ু-মুখ স্ত্রিনিংকৃত মহিলাকে একইসময়ে সিবিই পরীক্ষার জন্য কাউন্সিলিং করা হয়। ত্রিশ বছরের অধিক বয়সী সব নারীদের ভায়া ও সিবিই সেবা প্রদান করা হয় এবং সিবিই স্ক্রিনিংকৃত মহিলাদেরকে কীভাবে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করতে হয় তা শিখিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার ৩০-৬০ বছর বয়সী বিবাহিত সব নারীদের প্রতি তিন বছর পর পর ভায়া পরীক্ষা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করেছে বলেও জানান আলোচকরা।
অলোচনায় অংশ নিয়ে বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, স্তন ক্যানসার ও জরায়ু-মুখ ক্যানসার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে এই মরণব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্তন ক্যানসার পরীক্ষার জন্য সিবিই, জরায়ু-মুখ ক্যানসার পরীক্ষার জন্য ভায়া টেস্ট করা অত্যন্ত জরুরি। সাথে সাথে জরায়ু-মুখ ক্যানসার প্রতিরোধে মহিলাদের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, এস্টাবলিশমেন্ট অব ন্যাশনাল সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল অ্যান্ড ব্রেষ্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং অ্যান্ড ট্রেনিং এ্যাট বিএসএমএমইউ প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা, গাইনোকলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শিরিন আক্তার বেগম, অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস, অধ্যাপক ডা. ফওজিয়া হোসেন প্রমুখসহ অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগ, ফিটোম্যাটানাল মেডিসিন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থীরা।
কালের আলো/এমডিএইচ