চিকিৎসা সেবায় অনন্য সিপিএইচ, যুগোপযোগী করতে গুরুত্ব আইজিপির
প্রকাশিতঃ 8:45 pm | January 21, 2025
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ)। বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ স্থানীয় হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে তাঁরা মুছে দিয়েছে পিছিয়ে পড়া হাসপাতালের তকমা। পুলিশ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সেবায় স্থাপন করেছে অনন্য এক দৃষ্টান্ত। অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সংযোজনের মাধ্যমে হাসপাতালটিতে ক্রমশ বেড়েছে সেবার পরিধি।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন বাহারুল আলম। সিপিএইচকে তিনি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে রূপান্তরের স্বপ্ন বুনেছেন। স্বচক্ষে দেখেছেন পুলিশ সদস্য ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দিয়েছেন কার্যকর দিকনির্দেশনা। হাসপাতালটিতে সেবার মান আরও বাড়াতে পেশাদারত্ব, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, ১৯৫৪ সালে রাজধানীর রাজারবাগ সাড়ে ১১ একর জমির ওপর মাত্র ৭০ শয্যা নিয়ে পথচলা শুরু হয় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের (সিপিএইচ)। ৭০ বছরে এটির শয্যা সংখ্যা ৫০০তে উন্নীত করা হয়েছে। করোনাকালে এখানে সংযোজন করা হয় অত্যাধুনিক আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা। শুধু পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও পরিবার নয়; দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে কর্মরতরা হাসপাতালটিতে এখন সেবা পাচ্ছেন। করোনার দহন যন্ত্রণার সময় রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এখানে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। ওই সময় চিকিৎসা, আন্তরিক সেবাসহ সামগ্রিক পরিবেশের জন্য বেশ প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয় হাসপাতালটি।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আইজিপির মতবিনিময়কালে সভায় জানানো হয়- বর্তমানে হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার হাজার পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্য চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার পুলিশ সদস্য প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট গ্রহণ করেন। এছাড়া গত বছর চক্ষু বিভাগে ৭১২টি অপারেশন এবং অন্যান্য বিভাগে ৬ হাজার ৪৬৭টি অপারেশন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে।
হাসপাতালটিতে এখন রয়েছে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিট। সুক্ষ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৬০ স্লাইচ সিটিস্ক্যান মেশিন, এমআরআই মেশিন, ফোর-ডি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, ইকো-কার্ডিওগ্রাম ও ইটিটি সুবিধা। জরুরি রোগী সেবার জন্য চালু রয়েছে সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি সার্ভিস। রয়েছে ডিজিটাল ম্যামোগ্রাফি। রোগীর জন্য রয়েছে ব্লাড ব্যাংক। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো হাসপাতালকে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কার্যক্রম ও রোগীর তথ্য ডিজিটাল ফরমেটে সংরক্ষণ এবং মনিটরিং করার জন্য ইনফরমেশন সিস্টেম ও ল্যাবরেটরি ইনফরমেশন সিস্টেম সফটওয়ার চালু রয়েছে।
তবে এতো কিছুর মধ্যেও সম্ভাবনা জাগানিয়া হাসপাতালটিতে জনবল সঙ্কট দূর হয়নি। আইজিপি বাহারুল আলম হাসপাতালটি পরিদর্শন করে জনবল সঙ্কট দূর করতে প্রয়োজনীয় আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে যুগোপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এদিন তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বক্তব্য ধৈর্য ধরে শোনেন ও পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সেবা প্রদান অব্যাহত রাখায় চিকিৎসক এবং নার্সদের ধন্যবাদ জানান।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আইজিপি বাহারুল আলম সিপিএইচ পরিদর্শনকালে ডিজিটাল চিকিৎসা সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া রেজিস্ট্রেশন, ওপিডি, কনসালটেশন, মেডিসিন স্টোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ইত্যাকার বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, রেডিওলজি ও ইমেজিং, আইসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিটসহ বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি সেবা গ্রহিতা পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় সিপিএইচ পরিচালক ডিআইজি সরদার নুরুল আমিন, অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) ডা. মোঃ এমদাদুল হক ও সুপারিনটেনডেন্ট ডা. এ বি এম মো. খোরশেদ আলমসহ পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের (সিপিএইচ) পরিচালক ডিআইজি সরদার নুরুল আমিন কালের আলো’কে বলেন, ‘এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৫১৩টি পদ শুন্য রয়েছে। মাননীয় আইজিপি মহোদয় বিষয়টি অবগত রয়েছেন। আমরা আরও আগেই শুন্যপদগুলো পূরণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে (পিএসসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। চিকিৎসক ও নার্স পদে পিএসসি’র নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই হাসপাতালের সেবার মান আর বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি।’
কালের আলো/এমএএএমকে