ট্রাস্টের সম্পত্তি নিয়ে আবারও মুখোমুখি বিদিশা ও কাজী মামুনূর রশিদ
প্রকাশিতঃ 8:22 pm | January 22, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের সম্পত্তি নিয়ে আবারও মুখোমুখি বিদিশা ও কাজী মো. মামুনূর রশিদ। বুধবার (২২ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে বিদিশার একসময়ের এই সহযোগী অভিযোগ করেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিদিশা দম্পতির সন্তান এরিক জিম্মি অবস্থায় আছেন। কাজী মামুনের অভিযোগ, মা বিদিশা সন্তান এরিককে জিম্মি করেছেন।
যদিও এরিক এরশাদ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জানান, তিনি তার মায়ের কাছে নিরাপদ আছেন।
চিঠিতে এরিক উল্লেখ করেন, ‘আমি শাহাতা জারাব এরিক এরশাদ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একমাত্র সন্তান। আমার ভবিষ্যৎ জীবনযাপনের জন্য পিতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট গঠন করেন, যার একমাত্র সুবিধাভোগী আমি।’
গত ১০ জানুয়ারি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর এরিকের নিরাপত্তা ও ট্রাস্টের নীতিমালা রক্ষার্থে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
এরিকের দাবি, ফখর উজ জামান ট্রাস্টের অবৈধ চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি লিখেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কোনও ঝুঁকির মধ্যে নেই’।
চিঠিতে এরিক এরশাদ কাজী মামুন, ফখর উজ জামানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে কিছু নথিপত্রও মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে এরিকের মা বিদিশা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এরিক তার চিঠিতেই সব জানিয়েছে। আমি মন্তব্য করতে চাই না।’
এরিক তার চিঠিতে লিখেন, ‘বর্তমানে ট্রাস্টের নির্ভরযোগ্য আয়ের অভাবে আমি কেবল দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ও একটি দোকানের ভাড়ার ওপর নির্ভরশীল, যা আমার দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে আমাকে নিয়মিত আমার মায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিতে হচ্ছে।’
এরিক অভিযোগ করেন, কাজী মামুন তাকে তার মা বিদিশার কাছ থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছেন।
এদিকে, চিঠি দেওয়ার পরদিন আজ বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন কাজী মামুনূর রশীদ। রওশন এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাপার অংশের এই মহাসচিব কাজী মামুন দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এরশাদ পুত্র এরিকের খরচ বাবদ প্রতিমাসে বনানীস্থ কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে একটি দোকান, গুলশান ও বনানীতে দুটি ফ্ল্যাট থেকে প্রাপ্ত ভাড়া প্রায় তিন লাখ বিশ হাজার (৩,২০,০০০) টাকা দেওয়া হয়।’
‘বিদিশা সিদ্দিক এরিক এরশাদের ভরণ-পোষণের উসিলা দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে আসছেন আমাদের নিকট। বিদিশা সিদ্দিক এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে এরিক এরশাদকে।’
মামুন জানান, ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল সম্পাদিত এক দলিলে ট্রাস্ট গঠন করে তার বিষয়-সম্পত্তির বড় অংশ সেখানে দান করেন এরশাদ। ট্রাস্টের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ছেলে শাহাতা জারাব এরিকের ভরণ-পোষণ ও জনহিতকর কাজে ব্যয় হবে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয়। ট্রাস্টের আয় ভোগ ও কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে পারবেন না বিদিশা।
কাজী মামুন আরও উল্লেখ করেন, বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কের সাত হাজার বিয়াল্লিশ (৭০৪২) বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও পার্কিং, গুলশানের ৯৬ নম্বর সড়কের ৪/বি বাড়ির দুই হাজার একাত্তর (২০৭১) বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বনানীতে আল নাহিয়ান ট্রাস্টের সংযুক্ত আরব আমিরাত মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্সের এক হাজার ষাট (১০৬০) বর্গফুটের দোকান, রংপুরের ‘পল্লীনিবাস’, রংপুরের মিঠাপুকুরের ‘পল্লীবন্ধু কোল্ড স্টোরেজ’, পনের কোটি ৯ লাখ (১৫,০৯,০০,০০০) টাকার স্থায়ী ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়, শেয়ার এবং পাঁচটি গাড়ি ট্রাস্টে দান করেন এরশাদ। বাকি সম্পদ স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং বড় ছেলে রাহগীর আল মাহী এরশাদ শাদকে দিয়ে গেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
‘১৪ আগস্ট ২০২২ সালের পর থেকে এরশাদের রেখে যাওয়া ব্যাংক থেকে আমরা কোনও অর্থ উত্তোলন করিনি। দুটি ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকা ইতোমধ্যে মূল টাকায় যোগ হয়েছে’ দাবি করেন মামুনূর রশীদ।
কালের আলো/এএএন/কেএ