জামায়াতের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে : গোলাম পরওয়ার
প্রকাশিতঃ 5:34 pm | January 25, 2025
ভোলা প্রতিবেদক, কালের আলো:
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে হেলিকপ্টার থেকে দেশের নারী-পুরুষ, শিশু ও আলেম-ওলামার ওপর গুলি চালিয়েছে। এই দেশের মানুষ এতো বড় খুনি ফ্যাসিস্টকে আর রাজনীতিতে নৈতিকভাবে আইনগতভাবে কোনো অধিকার দেবে না।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ভোলা জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের কাছে আবেদন জানাই- সংস্কারের দাবি উঠেছে, আমরাও সংস্কার চাই। কিন্তু রাষ্ট্রের সমস্ত বিভাগ এতো অল্প সময়ে সংস্কার করা সম্ভব নয়। এটা একটা নির্বাচিত সরকার, জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তারা সংস্কার করবে। তবে একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্যে যেসব বিভাগ যুক্ত, যেমন পুলিশ বিভাগ, ইলেক্ট্রোলার সিস্টেম, বিচার বিভাগ, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য বিভাগগুলো সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। তাহলে আবারও ২০১৪, ১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের মতো হবে।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ কেউ নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে, বলে সংস্কারের দরকার নাই। সংস্কার হলো চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার আর নির্বাচন একসঙ্গে হবে। তাদের এসব কথার মধ্যে আমরা অন্য গন্ধ পাই। সেই আমি-ডামি নির্বাচনের মতো তারাও কেটেকুটে বাক্স ভর্তি করতে চায়।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শেখ হাসিনা শেখ, রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, পুতুল, টিউলিপ দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ৯টি মেগা প্রকল্প থেকে লাখ লাখ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং বিদেশে পাচার করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৮ বছরের ইতিহাস ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের একটি কালো যুগ। এ যুগে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার ছিল না, অর্থনৈতিক অধিকার ছিল না, বিচারিক আদালতে মানুষের সুবিচার ছিল না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে আমাদের জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের ইসলামী মূল্যবোধকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা এভাবেই আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এ জন্য ইতিহাসে একজন জঘন্য ঘৃন্য ফ্যাসিবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক অবদান ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন,আমরা রাজনৈতিক দলের নেতারা গত ৩টা নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে পারিনি। বহু লোক জীবন দিয়েছে, বহু লোক নিহত হয়েছে, মামলা হয়েছে। আমাদের দেশের তরুণ ছাত্ররা, সেই আন্দোলন তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমাদের সন্তানরা সেই আন্দোলন জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে সফল করেছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলছে। ফ্যাসিবাদের লোকেরা জামায়াতে ইসলামীকে যেভাবে নির্মূল করতে চেয়েছিল, তাদের মুখেও এখন ফ্যাসিবাদের সেই গন্ধ পাওয়া যায়। এই পথ সর্বানাশার পথ। ফ্যাসিবাদের যুগের অবসান হয়েছে। একটি জাতীয় ঐক্যের ভিক্তিতে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে আসুন অনৈক্য-বিভেদ,বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কোনো ভূমিকা না নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য আগস্টের মূল চেতানাকে ধারণ করে আমরা একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে এগিয়ে যাই।
জামায়াতে ইসলামীর ভোলা জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মুহাম্মদ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা কাজী হারুনুর রশিদের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগরীর আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও বরিশাল অঞ্চলের টিম সদস্য একে এম ফখরউদ্দিন খান রাযী প্রমুখ।
কালের আলো/এমডিএইচ