অনলাইনে ১২ লাখ রিটার্ন জমা, জরিমানা দিয়ে চলবে সারা বছর
প্রকাশিতঃ 5:39 pm | January 26, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
এ পর্যন্ত অনলাইনে ১২ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে। রিটার্ন সারা বছর ধরে চলতে থাকবে।
তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরে ২ শতাংশ হারে বাড়তি টাকা (জরিমানা) দিতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক কাস্টম দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, পুরো রাজস্ব দিতে হবে বলে ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে করতে যান না। কিন্তু ঠিকই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রযুক্তি রপ্ত করছেন এবং ব্যবহার করছেন।
গৃহকর্মী এবং গার্মেন্টস শ্রমিকরা প্রতি মাসে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে গ্রামের বাড়িতে বাবা-মার কাছে টাকা পাঠান। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ প্রযুক্তির ব্যবহার করে ট্যাক্স দিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমরা ভ্যাটের হার কমাব, ট্যাক্সে হার কমাব, কিন্তু আপনারা দয়া করে আপনাদের পুরনো প্র্যাকটিস ‘সব ট্রাঞ্জেকশন রেকর্ডেড না করা’ সেটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এতে আপনার জীবনও সহজ হবে, আমাদের জীবনও সহজ হবে। আপনাদের যত ধরনের সমস্যা আছে, বিশেষ করে আমদানি পর্যায়ে প্রচুর ভুল ঘোষণা হয়। যখনই এগুলো ধরা হয় তখন বলা হয়, সঠিক কোডে ট্যাক্স বেশি এজন্য এটা করা হয়। আপনাদের যে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে আছেন তাদের মাধ্যমে বা সরাসরি সমস্যার কথা বলেন। যে কোনো সমস্যার সমাধান করব। প্রয়োজনে এইচএস কোড ঠিক করে দেব, ডিউটি চার্জও ঠিক করে দেব। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করা থেকে আমরা বের হতে চাই।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কাস্টমসের মাধ্যমে যত মালামাল বের হয় একদিনের মধ্যে তার ৯০ ভাগ ছাড় হয়ে যায়। আর চারদিনের মধ্যে আরও ৫ শতাংশ তথা মোট ৯৫ ভাগ মালামাল ছাড় হয়ে যায়। বাকি যেগুলো থেকে যায় এইচএস কোডের মিস-ম্যাচের সমস্যা ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্টিফিকেশনের সমস্যার কারণে।
কাস্টমের অফিসারদের সতর্ক করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, কাস্টমেও বিহেবিয়ারে সমস্যা ছিল। এখন কাস্টম বা টাক্সের যারা আছে তারা পবিবর্তিত অবস্থার ফলে অনেক বেশি উজ্জীবিত। আমরা তাদের বার্তা দিয়েছে যদি আগের মত চলতে চায় তাহলে তারা বড় ধরনের সমস্যায় পড়বেন। আমরা কোনোভাবেই আগের মত ঢিমেতালে চলা সহ্য করবো না, অ্যাকশন নেব।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ব্যবসায়ীদের একটি টেনডেনসি হলো, টাক্স মওকুফ না দিলে ব্যবসা চলবে না। তাহলে উন্নত দেশগুলো কীভাবে এটা করলো। তাদের কোনো ট্যাক্স মওকুফ নেই। আপনি ব্যবসা করবেন কি করবেন না তা নির্ভর করবে আপনার রিটার্ন আসবে কি আসবে না তার ওপর। আপনি ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে হিসাব করেন আপনি ব্যবসা করবেন কি করবেন না। এটা করার পর যদি ফিজিবল হয় তাহলে করবেন, না হলে করবেন না। কিন্তু ট্যাক্স-ভ্যাট সব মাফ করে দিলে ব্যবসা হবে, না দিলে ব্যবসা হবে না-এ ধরনের কথা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে সুশাসন। আমাদের অনেক ব্যবসায়ী আছেন, নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় আছে। তারা অন্যকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। আমরা যখন ইলেকট্রনিক ইজিপিসহ অন্যান্য কাজ করলাম, সেখানেও একই অবস্থা। যারা প্রভাবশালী তারা অন্যদের থ্রেট করে বের করে দেয়। আমদানি, রপ্তানি সব জায়গায়তে এসব সমস্যা রয়েছে। গুটি কয়েকের হাতে সব কিছু চলে যাচ্ছে। এসব যদি উন্মুক্ত করে দিতে পারি, আমাদের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে ব্যবসায়ীদের এসব সমস্যা থাকার কথা না।
ব্যবসায়ীদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, সরকার আপনাদের আয়ের ছোট্ট একটি অংশ নিয়ে থাকি। পুরোটা দিয়ে নিই না। যেটা থাকবে সেটা দিয়ে আপনার ব্যবসা বড় করুন। আমরা প্রতিনিয়ত ঘাটতি বাজেট করবো, আমাদের ঋণের বোঝা বাড়বে, উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের চাপ দেবে। যখন দেখবে আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না তখন আমাদের ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। সেই চাপ এখন আমরা সহ্য করছি। আমাদের মোট আয় চলে যাচ্ছে ঋণ আর ঋণের সুদ পরিশোধ করতে করতে। তাহলে আমাদের দেশ চলবে কি করে? ধীরে ধীরে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বাজেট করার দিকে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
কালের আলো/এমডিএইচ