রোবটিকসের ওপর গবেষণায় দিকনির্দেশ শিক্ষা উপদেষ্টার, প্রযুক্তিগত শিক্ষায় এমআইএসটি’র বিশেষ ভূমিকাকে সমুজ্জ্বল করলেন তিন বাহিনী প্রধান

প্রকাশিতঃ 10:33 pm | January 27, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। যার গতির দৌড় কল্পনার চেয়েও বেশি। এই বিপ্লবটির ভিতই হচ্ছে- ‘জ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ভিত্তিক কম্পিউটিং প্রযুক্তি। রোবটিক্স, আইওটি, ন্যানো প্রযুক্তি, ডাটা সায়েন্স ইত্যাদি প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে নিয়ে যাচ্ছে অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স-এ অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এর কার্যক্রম এখনও বেশ পেছনের দিকেই। জ্ঞানভিত্তিক এই শিল্প বিপ্লবে প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে দক্ষ মানবসম্পদই বেশি মূল্যবান হওয়ায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই এবং রোবটিকসের ওপর গবেষণা ও জ্ঞানার্জনে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

দেশে প্রকৌশলে উচ্চ শিক্ষা প্রদানে স্বনামে খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সিল অব এমআইএসটি-এর ২২তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সামনের সারিতে থাকতে এআই ভিত্তিক গবেষণা ও কার্যক্রম বৃদ্ধির বিষয়েও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। ডিজিটাইজেশনের মতো অত্যাধুনিক পদক্ষেপে প্রতিষ্ঠানটি নবতর দিগন্ত উন্মোচন করছে প্রতিনিয়ত। ‘কাউন্সিল অব এমআইএসটি’, এমআইএসটি-এর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বডিতে সহ-সভাপতি হিসেবে যারপরেনাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। উদ্যমতা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে এমআইএসটি তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের অগ্রগতিকে সমুজ্জ্বল করার মাধ্যমে সমৃদ্ধির বর্ণিল দুয়ারে পৌঁছে দিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নবপ্রাণের সঞ্চার ঘটিয়ে স্বপ্নজয়ের বীজ বপন করবে বলেও মনে করেন তাঁরা।

সভায় এমআইএসটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। এমআইএসটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অর্জন ও চ্যালেঞ্জ সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন। এছাড়া সভায় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে বিভিন্ন বিভাগের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে নতুন অনুষদ ও প্রোগ্রাম চালু, সাইবার সিকিউরিটিতে এমএসসি ডিগ্রি প্রোগ্রাম প্রবর্তন, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার (বিআরআইসি) স্থাপন এবং ‘ইঞ্জিনিয়ারিং সেল’ গঠনের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের গুরুত্ব তুলে ধরে নিজের সমাপনী বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব সিদ্ধান্তসমূহ এমআইএসটির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠার থেকেই জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জনে দৃষ্টি দিয়েছে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে এগিয়ে যেতে প্রযুক্তি কেন্দ্রিক গবেষণায় দিয়েছে বিশেষ মনোযোগ। প্রযুক্তির বাঁকে প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে জুগিয়ে চলেছে অন্তহীন অনুপ্রেরণা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মার্ট টেকনোলজির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার পাশাপাশি প্রকৌশলগত প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, শিল্পকারখানা পরিদর্শন ও বৃত্তিসহ নানা কর্মকাণ্ডের সংস্থানে গুরুত্ব দিয়ে দেশের ভবিষ্যত প্রযুক্তিগত বিকাশকে করছে ত্বরান্বিত। শিক্ষায় স্মার্ট প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতাকে আরও সমৃদ্ধ করতেও প্রতিনিয়ত রেখে চলেছে অবদান। তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রতিযোগিতার নতুন বিশ্বে এমআইএসটি’র শিক্ষার্থীরাও নিজেদের প্রমাণ করছে একদিন-প্রতিদিন। সত্যিকারের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়েছে নানান কর্মপ্রয়াস।

অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) তে কাউন্সিল অব এমআইএসটি-এর ২২তম সভায় যোগ দেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এমআইএসটি’র দু’মেধাবী মুখ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শাইখ আস্-হা-বুল ইয়ামিন এবং মেকানিক্যাল বিভাগের সাবেক ছাত্র মো. রাকিবুল হোসেনসহ সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই আন্দোলনে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তাদের এই আত্মত্যাগকে চির অম্লান করে রাখতে শহীদ শাইখ আস্-হা-বুল ইয়ামিন এর নামে এমআইএসটি এর নবনির্মিত অডিটোরিয়াম এবং শহীদ মো. রাকিবুল হোসেন এর নামে এমআইএসটির এর মুক্তমঞ্চের নামকরণ ও এমআইএসটি’র কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শহীদ ইয়ামিন-শহীদ রাকিবুল কর্নার স্থাপনের প্রশংসা করেন।

তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে কেবল শিল্পের উপরেই নয় মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টিকে মোটা দাগে উপস্থাপন করেন। প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন যুগের চাকরির জন্য উঁচু স্তরের কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন তারুণ্য অপরিহার্য বলেও মনে করেন। বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করতে সামনের সময়ে তরুণ বা উৎপাদনশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীই বড় হাতিয়ার হবে। ফলে নতুন ধারার নানা কর্মক্ষেত্র উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতেও উপদেষ্টা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এমআইএসটির বর্তমান পরিকল্পনা ও অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপরও জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (ফোরআইআর) সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং রোবটিকসের ওপর গবেষণা ও জ্ঞানার্জনে এমআইএসটির প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সভায় সহ-সভাপতির বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এমআইএসটির অগ্রগতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও গবেষণায় উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় এমআইএসটির নেতৃত্বের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ এবং উচ্চমানের প্রযুক্তিবিদ তৈরিতে এমআইএসটির অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

এ সময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন, বিইউপি’র ভাইস চ্যান্সেলর মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুব-উল-আলম, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন্ চীফ মেজর জেনারেল মুঃ হাসান-উজ-জামান, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল খন্দকার মো. শাহিদুল এমরান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ কবিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে