৪৭০ দিন পর নিজ এলাকাতে ফিরলেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি

প্রকাশিতঃ 9:33 am | January 28, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

প্রায় ১৫ মাস ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে ইসরায়েল। দীর্ঘ এই সময়ে হামাস নিধনের নামে নির্বিচার হামলা ও অভিযান চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী; নিরাপদ বলে কোনও জায়গাই অবশিষ্ট ছিল না পুরো উপত্যকা জুড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে ভূখণ্ডটির উত্তরাঞ্চলে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার অবশেষে নিজেদের এলাকাতে ফিরতে শুরু করেছেন উত্তর গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা।

সবশেষ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) উপত্যকার সবচেয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশটিতে ফিরেছেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার জনসংযোগ দপ্তর। খবর এএফপির।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর উত্তর গাজার এই বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ এতদিন উপত্যকার দক্ষিন ও মধ্যাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ৪৭০ দিন পর নিজেদের বাড়িঘরে ফিরছেন তারা।

ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উত্তর গাজায় এখন কোনো বাড়িঘরই অক্ষত নেই। কিন্তু তারপরও প্রায় ১৫ মাস পর নিজেদের এলাকায় ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত এখানকার বাসিন্দারা।

সোমবার সকাল থেকেই নেৎজারিম করিডোর দিয়ে উত্তর গাজায় আসতে শুরু করেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। অনেকেই ঘোড়া কিংবা গাধার গাড়িতে নিজেদের মালপত্র নিয়ে আসেন। উত্তর গাজার কেন্দ্রীয় শহর গাজা সিটির প্রধান সড়কের একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে ‘গাজায় স্বাগতম’ লেখা ব্যানার টাঙানো ছিল এ সময়।

উত্তর গাজার বাসিন্দা ২২ বছরের তরুণী লামিস আল ইওয়াদি দীর্ঘদিন পর নিজ এলাকায় ফিরতে পেরে খুবই আনন্দিত। এএফপিকে তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আমার মনে হচ্ছে— এতদিন আমি মৃত ‍ছিলাম; আজ আমার দেহে ফের জীবন এবং আত্মা ফিরে এসেছে।

চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধ্বংস্তূপ তাকে হতাশ করতে পারেনি। এএফপিকে লামিস বলেন, আমরা আবার আমাদের ঘরবাড়ি তৈরি করব। এমনকি যদি শুধু বালি আর কাদা দিয়ে তৈরি করতে হয়, তবুও।

গাজায় হামাসের এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় ফিরে আসা এই বাড়িঘর হারানো এই ফিলিস্তিনিদের সাময়িক আশ্রয় হিসেবে অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবু প্রয়োজন।

২০২৩ সালের ৭ আগস্ট ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের এক হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। হামাস উৎখাতের নামে টানা ১৫ মাস ধরে চলা সে অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ হাজারের বেশি নিরপরাধ ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১২ হাজার জন এবং গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

কালের আলো/এসএকে