খাদ্যমূল্য বাড়াতে মধ্যস্থতাকারীদের জটিল নেটওয়ার্ক, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব

প্রকাশিতঃ 6:05 pm | January 29, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার পেছনে দেশে মধ্যস্থতাকারীদের একটি জটিল নেটওয়ার্ক রয়েছে। এ নেটওয়ার্ক ভাঙতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩.৭ শতাংশ; যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭.৭ শতাংশ। এমতাস্থায় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে, যা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ১৮.১ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫: প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব অভিমত ব্যক্ত করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বিফিংয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন

মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদ, গম, মসুর ডাল, চিনি, গরুর মাংস, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল এবং পাম তেলসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণে দামের ওঠানামা এবং অদক্ষতার জন্য বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে মজুদদারি, কমিশন এজেন্ট বা গুদাম পরিচালনাকারীদের আধিপত্য, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি পদ্ধতি, উচ্চ উপকরণ খরচ, নিম্নমানের সংরক্ষণ এবং পরিবহন সুবিধা এবং সামগ্রিক সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া।

তিনি বলেন, চালের বাজার ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত জটিল। যে কারণে সিপিডি চালের সরবরাহ চেইনে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করে, বিশেষ করে মাঝারি-পাইজাম চাল। যার লক্ষ্য ছিল- প্রধানত দামের যে অস্থিরতা, এর মূল কারণগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করা। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য বাজার এজেন্ট রয়েছে। বাজার মূল্যের ওপর গুদাম মালিকদের বা অটো রাইস মিলারদের উল্লেখযোগ্য আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ফলস্বরূপ ধান চাষীরা প্রায়শই সঠিক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তারা অযৌক্তিকভাবে উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হন, যার ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।

সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.৭ শতাংশ যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭.৭ শতাংশ অর্থাৎ এখানে উল্লেখযোগ্য অবনতি দেখা গিয়েছে। ২০২৫ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের বাকি সময় ৪৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে যা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সামগ্রিকভাবে কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। কর রাজস্বের দুটি উৎসেই (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ও বহির্ভূত) একই চিত্র দেখা গেছে।

বাজেট বাস্তবায়নের হার নিন্মগতি উল্লেখ করে সিপিডি জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ১৮.১ শতাংশ। পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় যা ছিল ১৬.০ শতাংশ। অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৬.১ শতাংশ। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় এটি ছিল ৮.৯ শতাংশ। জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, এডিপি প্রকল্পের পুনঃপ্রাধান্য নির্ধারণ এবং পুনর্মূল্যায়ন, প্রশাসনিক রদবদল এর বড় কারণ। তবে এডিপি বহির্ভুত বাজেট বাস্তবায়নের হারে জুলাই-অক্টোবর ২০২৫ অর্থবছরে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।

কালের আলো/এএএন/কেএ