বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে কেঁপে উঠলো বঙ্গোপসাগর, ঘোষণা দিলো এক নিরাপদ জলসীমার
প্রকাশিতঃ 10:19 pm | January 29, 2025
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
শুধু সফলভাবে মিসাইল উৎক্ষেপণই নয়, মহড়ার পরতে পরতে ছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তিমত্তা প্রদর্শনের আয়োজন। মহড়ায় অংশ নেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফ্রিগেট, করভেট, ওপিভি, মাইন সুইপার, পেট্রোল ক্রাফট, মিসাইল বোটসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাহাজ, নৌবাহিনীর মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট ও হেলিকপ্টার এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস্। বঙ্গোপসাগরে বিশাল জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ সমুদ্রে সম্পদ রক্ষা, মানবপাচার, চোরাচালান রোধ, জেলেদের নিরাপত্তা বিধান ও উপকূলীয় এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় মহড়াটিতে। নৌবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে কেঁপে উঠে বঙ্গোপসাগর। শত্রুর বিপক্ষে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আয়োজিত ‘এক্সারসাইজ সেইফগার্ড’ কার্যত বঙ্গোপসাগরে আরও শক্তিশালী ও সুসংহত করেছে নিজ দেশের অবস্থানকে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজে আরোহণ করে সমাপনী দিবসের মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন। সুবিশাল সমুদ্রের নিরাপত্তা বিধান, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সমুদ্র সম্পদের হেফাজত করতে নিরলসভাবে কাজ করা বাংলাদেশ নৌবাহিনী এদিন আবারও জানান দিয়েছে তাঁরা প্রস্তুত দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কিংবা ৩৬৫ দিনই। এর আগে তিন বাহিনী প্রধান জাহাজে এসে পৌঁছালে কমান্ডার বিএন ফ্লিট তাঁদের স্বাগত জানান। এ সময় নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁদের গার্ড অব অনার প্রদান করে।
জানা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তায় নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বার্ষিক সমুদ্র মহড়া ‘এক্সারসাইজ সেইফগার্ড’ এর আয়োজন করা হয়। বহি:শক্তির বৈরী মনোভাব, কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা, আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বিষয়সমূহ বিবেচনা করে বিভিন্ন ধাপে কৌশল নিরূপণের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় মহড়ার। এছাড়া শান্তিকালীন সময়ে নৌবাহিনীর দায়িত্ব যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করতে মহড়ায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়। বার্ষিক এই মহড়ার মাধ্যমে দেশপ্রেমে আপোসহীন প্রতিটি নৌ সদস্যের মনোবলই শুধু বাড়বে না বরং এর মাধ্যমে আরও একবার বিশ্ব দরবারে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা দিলো এক নিরাপদ জলসীমার।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, নৌবাহিনীর এবারের বার্ষিক সমুদ্র মহড়ায় বাংলাদেশ সেনা ও বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট মেরিটাইম সংস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। নৌ সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ অর্জনে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহের মধ্যে ছিল- নৌ বহরের বিভিন্ন কলাকৌশল অনুশীলন, সমুদ্র এলাকায় পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান, লজিস্টিক্স অপারেশন ও উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত নৌ স্থাপনাসমূহের প্রতিরক্ষা। চূড়ান্ত দিনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে মিসাইল উৎক্ষেপণ, বিমান বিধ্বংসী গোলাবর্ষণ, সাবমেরিন বিধ্বংসী রকেট ডেপথ চার্জ নিক্ষেপ, ভিবিএসএস, নৌ কমান্ডো মহড়া ও নৌ যুদ্ধের বিভিন্ন কলাকৌশল অনুশীলন করা হয়।
মহড়ার সফল সমাপ্তির পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের সকল কর্মকর্তা ও নাবিকদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে তাঁরা সফল মহড়ার জন্য নৌ সদস্যদেরকে অভিনন্দন জানান। নৌ সদস্যদের দেশাত্মবোধ, পেশাগত মান, দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। চূড়ান্ত পর্বে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনী প্রধান উপস্থিত থেকে মহড়াকে আরও তাৎপর্যময় করে তোলায় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান তাঁদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সাধারণত মাতৃভূমির সুরক্ষা ও অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য একটি দেশের সামরিক শক্তি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করে চলতি বছর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সূচকে বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এবার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। এশিয়ার দেশগুলোর সামরিক শক্তির তালিকায় দেশটির অবস্থান ১৭তম। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এমন অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ কৌশলে আরও এগিয়ে নিবে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, এমন অভিমত বিশ্লেষকদের।
কালের আলো/এমএএএমকে