৫ আগস্টসহ বিভিন্ন আন্দোলনের পেছনের কারণ দুর্নীতি: দুদক চেয়ারম্যান

প্রকাশিতঃ 12:24 pm | January 30, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে যারা কাজ করছেন তারা যদি দুর্নীতিতে না জড়ান তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে আসবে। এ সমাজে একেবারেই দুর্নীতি নির্মূল হবে সেটা আমি বলছি না।

দুর্নীতি পুরোনো আমলেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হলে দুর্নীতি আমরা অনেকটাই কমিয়ে নিয়ে আসতে পারব। আমাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষা একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠন। এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সবার সদিচ্ছা। যদি আমাদের সদিচ্ছা থাকে তাহলে দুর্নীতি অনেকটাই কমে আসবে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত কিংবা বিভিন্ন সময়ে যে আন্দোলন হয়েছে বা হচ্ছে তার পেছনের কারণটা কী? কারণ হচ্ছে, সমাজে আমরা এক ধরনের অবিচার লালন করি। প্রতিটি অবিচারের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে এর মূলে রয়েছে দুর্নীতি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) কুমিল্লায় দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানি চলাকালে এসব কথা বলেন তিনি। কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এই আয়োজন করা হয়।

প্রিপেইড মিটার শুভঙ্করের ফাঁকি বলে উল্লেখ করেছেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলী আকবার আজিজী। এ সময় তিনি মন্তব্য করেন, একটা মুরগি দুবার জবাই, এটা হয় না! আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। এই গণশুনানির পূর্বেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় বুথ স্থাপন করে অভিযোগ নেয় দুদক। সেখানে ১২১টি অভিযোগ জমা হয়। ৪০টি অভিযোগ তফসিলভুক্ত হওয়াতে সেগুলো গ্রহণ করে শুনানির জন্য ডাকা হয়।

শুনানিতে কুমিল্লার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন ভুক্তভোগীরা।

কুমিল্লার বরুড়া থেকে এক ব্যক্তি কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে তার ৫০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি প্রমাণস্বরূপ আনসার সদস্যের ৫০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার ভিডিও হলভর্তি জনতার সামনে বড় স্ক্রিনে প্রচারের অনুরোধ করেন। তা প্রচারও করা হয়। ওই ভুক্তভোগী আবার বলেন, দুদকে অভিযোগের পর তার কাছ থেকে নেওয়া ৫০০ টাকা ফেরত দেওয়া হয় বিকাশের মাধ্যমে।

এদিকে ২০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে কুমিল্লা জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিরুদ্ধে। মো. রাসেল নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তিনি পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন করতে গেলে তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশের একটি গ্যারেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা চেয়ে পরে চা নাশতার জন্য ২০০ টাকা নেন সেলিম নামের এক কর্মকর্তা। তার এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান।

নগরীর ইসলামপুর এলাকার কাজী আনিস আহমেদ নামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, কুমিল্লায় নিমতলির মতো বড় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ সময় তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, নগরীর ইসলামপুর এলাকায় আমার প্রতিবেশী ৫ ফুটও রাস্তা না রেখে ৬ তলা বাড়ি করে ফেলেছেন। যখন কাজ শুরু করছিল আমরা বারবার অভিযোগ করেও ব্যবস্থা নিতে দেখিনি সিটি করপোরেশনকে। এখন সেই বাড়ি হয়ে গেছে। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নাগরিক সেবা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে এলজিইডির উচ্চমান সহকারী মো. ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে এক ঠিকাদার অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি হল ভর্তি মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে ইকবাল হোসেনের দিকে আঙুল তুলে বলেন, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের মাধ্যমে আমার কাজের বিল আটকে দেন ইকবাল। পরে আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এ সময় ইকবালকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি চুপ করে থাকেন। পরে দুদক চেয়ারম্যান এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিনকে ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

এছাড়াও ভুক্তভোগীরা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কুমিল্লা সদর হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন প্রমুখ।

কালের আলো/এএএন/কেএ