ইজতেমা শুরুর আগেই মুসল্লিদের পদভারে মুখর তুরাগ তীর

প্রকাশিতঃ 2:09 pm | January 30, 2025

গাজীপুর প্রতিবেদক, কালের আলো:

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হবে এবার বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসরের প্রথম পর্বের কার্যক্রম। তবে একদিন আগেই ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে মাঠ।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আম বয়ানের মাধ্যমে বিশ্ব ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান। এতে অংশগ্রহণ করছেন ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের তাবলিগের সাথীরা।

ইজতেমা উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মুসল্লিদের সুবিধার্থে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।

ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার থেকেই প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন খিত্তা ও পয়েন্টের জিম্মাদার মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। যারা ইজতেমা ময়দানে এসেছেন তারা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান করছেন। দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের ঢল থাকবে আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে।

এবারের ইজতেমা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই পর্ব।

ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, এবার প্রথম শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে ঢাকাসহ ৪১ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবে। এই পর্বে অংশগ্রহণ করছে গাজীপুর, টঙ্গী, ধামরাই, গাইবান্ধা, মিরপুর, কাকরাইল, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, কাকরাইল, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী জেলার মুসল্লিরা।

ইতোমধ্যে ৫০টিরও বেশি দেশের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। মূল ময়দানের পশ্চিম পাশে নির্ধারিত কামরায় অবস্থান করছেন তারা।

হাবিবুল্লাহ রায়হান আরও বলেন, তাবলিগের মেহনত একটি দ্বীনের অন্যতম মেহনত এবং দ্বীনের ধারক-বাহক হচ্ছেন ওলামায়ে কেরাম। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থেকেই তাবলিগের মেহনত করতে চান। এই সংখ্যাটা এতো ব্যাপক যে, টঙ্গী মাঠের ১৬০ একর জায়গায় তাদের অবস্থান করাটা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। এজন্য এবার দুই ধাপে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিকে ইজতেমা সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, ডেসকো, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনসহ নানা সেবা প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজোয়ান হোসেন বলেন, এবার মুসল্লিদের সুবিধার্থে ৯ হাজার পাকা টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের ওযু, গোসলের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা হবে।

ইজতেমার নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। পুরো ময়দান পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, এবার ইজতেমায় পোশাকধারী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্য থাকবে। ময়দান এলাকায় র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল ছাড়াও বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড থাকবে। সাদা পোশাকে কাজ করবে পুলিশ। এছাড়া ১৬টি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, সেখান থেকে বাইনোকুলার দিয়ে পুরো মাঠ দেখা হবে। ১৫টি সাব কন্ট্রোল কক্ষ থাকবে, সাব কন্ট্রোল কক্ষে যে কোনো রিপোর্ট করলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।

তিনি আরও বলেন, ড্রোনের মাধ্যমে আমরা পুরো এলাকা মনিটর করব, যেন কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পুরো মাঠ ৩৩৫টি সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে, ৩৫টি রুফটফ থাকবে, স্থির ব্রিগেড থাকবে ৫৩টি, ২০টি মোবাইল পার্টি সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকবে, ২০টি চেকপোস্ট থাকবে- তাদের কাজ হবে যেন দুষ্কৃতকারী ময়দানে প্রবেশ করতে না পারে।

নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তাকে সাজানো হয়েছে। র‌্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশন, সড়ক জনপথ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া ইজতেমার নিজস্ব ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তায় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে।

তুরাগ তীরের ময়দানকে ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নাজমুল করিম বলেন, ফুটপাত উচ্ছেদ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে, ট্রাফিক ব্যবস্থা সুন্দর করতে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক এই সড়ক দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। মোনাজাতের দিন কোনো গাড়ি চলবে না ইজতেমা এলাকায়। মুসল্লিদের যেন সমস্যা না হয় সেজন্য গাড়ি চলাচল মুক্ত রাখা হবে।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। আট দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাদপন্থীদের ইজতেমা শুরু হবে, যা ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

কালের আলো/এএএন/কেএ