শ্রীপুরে কলেজছাত্রকে অপহরণের চেষ্টা, এরপর যা ঘটল 

প্রকাশিতঃ 9:11 am | January 31, 2025

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক কালের আলো:

গাজীপুরের শ্রীপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সাগর নামে এক কলেজছাত্রকে অপহরণের পর মারধর করে তার মা’র কাছে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে কয়েক যুবকের বিরুদ্ধে। ছাত্রকে আটক রেখে তার বাড়িতে টাকা আনতে গেলে দুইজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। তবে পুলিশ বলছে এটা অপহরণ নয়, তাদের মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে লেনদেন রয়েছে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে শ্রীপুরের মুলাইদ (মধ্যপাড়া) গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সাগর (২১) উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ (মধ্যপাড়া) গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি স্থানীয় মাওনা পিয়ার আলী কলেজের এইচ এসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন- একই ইউনিয়নের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে তৌফিক (২৪), বেলাল সরকারের ছেলে শিমুল (২৮), নাজিম উদ্দিনের ছেলে হাসান (২৫) এবং কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার ভিনারুকান্দি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে সাদেক (৩০)। তাদের মধ্যে স্থানীয় জনতা হাসান এবং সাদেককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত সাগর জানান, বুধবার রাত ১০টায় অভিযুক্ত তৌফিক, শিমুল, হাসান এবং সাদেক তাকে বাড়ি থেকে ডেকে বের করে। পরে একটি সিএনজিযোগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপজেলার রঙ্গীলা বাজার এলাকায় তৌফিক সিএনজি পাম্পে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আটক করে রাখে।

এ সময় তৌফিক তাকে ধরে রাখে এবং শিমুল গলায় সিগারেটের আগুন দিয়ে সেকা দেয়। এ সময় তাদের মধ্যে থেকে একজন পেট্রোল এনে তার গায়ে ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে সেখান থেকে তাকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে মুলাইদ এলাকার সফিক মোড়ে একটি স্কুলের ঘরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে রড, লাঠি এবং এস পাইপ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিট করে। পরে তৌফিক ও শিমুল তাকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে রাজেন্দ্রপুরে নিয়ে যায় এবং হাসান ও সাদেক সাগরের বাড়ীতে যায় তার মার কাছ থেকে টাকা আনতে যায়। এর আগেই সাগরের বড় ভাই জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে ছোট ভাইকে অপহরণের বিষয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির তাদের বাড়ীতে গেলে স্থানীয় জনতা হাসান ও সাদেককে পুলিশে সোপর্দ করে। তাদের দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করার খবর তৌফিক ও শিমুলের কাছে গেলে তারা সাগরকে রাজেন্দ্রপুর জঙ্গল থেকে গাজীপুরের ভোগড়া (বাইপাস) পার হয়ে ভোর ৫ টায় তাকে প্রাইভেটকার থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। এর আগে সাগরকে এ বিষয়ে কাউকে কোন কিছু না বলার জন্য হুমকি দেয়। পরে অসুস্থ অবস্থায় সে এক রিক্সা চালকের কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে বাড়িতে ফোন দিলে তার স্বজনেরা ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ভোগড়া (বাইপাস) এলাকা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখে।

সাগর আরও জানান, অভিযুক্তরা তার কাছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাবে বলে দাবি করেন। সাগরের বাবা আব্দুস সালাম মাওনা কাঁচা বাজারের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করে।

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির জানান, আমি ৯৯৯-নাম্বারে খবর পেয়ে মুলাইদ (মধ্যপাড়া) গ্রামে গিয়ে দেখি স্থানীয় জনতা হাসান ও সাদেক দু’জনকে সিএনজিসহ আটক করে রেখেছে। পরে সেখানে থেকে তাদের দুজনকে থানায় নিয়ে আসি এবং স্থানীয় এক জনের জিম্মায় সিএনজি রেখে দেওয়া হয়।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, এটা অপহরণ নয়, তাদের মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে লেনদেনে রয়েছে। টাকা দেয় না সে কারণে তাকে নিয়ে গিয়েছিল অভিযুক্তরা। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করাটা তাদের অন্যায় হয়েছে। দুজনকে আটকের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন আমরা ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। এখনো তাদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। তারা অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালের আলো/এসএকে