চিকিৎসকের ‘অবহেলায়’ রোগীর মৃত্যু, ডাক্তারের নামের পাশে ‘ভুয়া’ পদবি
প্রকাশিতঃ 9:33 am | January 31, 2025
কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক কালের আলো:
কিশোরগঞ্জে সিজারে অবহেলার কারণে রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জেলা শহরের একরামপুর এলাকায় দি ল্যাব এইড জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া ওই নারীর নাম আকলিমা আক্তার। তিনি সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের কলাপাড়া এলাকার সবজি ব্যবসায়ী আলম হাসানের স্ত্রী। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. তাবাসসুম ফেরদৌস। তিনি ওই হাসপাতালের গাইনি, বন্ধ্যাত্ব ও স্ত্রীরোগের চিকিৎসক ও সার্জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা ১১টায় সন্তান প্রসবের জন্য আকলিমা আক্তারকে দি ল্যাব এইড জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বামী ও আত্মীয়রা। এ সময় রোগীকে জরুরি সিজারের কথা বলেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সিজারে নিয়ে যাওয়ার পর দুপুর ১টায় সেখানে সন্তানের জন্ম দেন আকলিমা। এদিকে ততক্ষণে মৃত্যু পথযাত্রী তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সিজারের পর কোনোভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। পেটে কাটা জায়গায় কোনোভাবেই সেলাই করা সম্ভব হচ্ছে না। রোগীর আত্মীয়রা কিছু বুঝে উঠার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দ্রুত রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সেখানে মারা যান তিনি।
নিহত আকলিমার স্বামী আলম হাসান বলেন, আমার এক আত্মীয়ের কথায় দি ল্যাব এইড হাসপাতালে স্ত্রীর সিজার করতে নিয়ে আসি। সেখানে গিয়ে ডাক্তার ও হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে কথা বলি। আমার স্ত্রীর এটি চতুর্থ সিজার ছিল। তারা বলেছে সমস্যা নাই। ডাক্তার ও হাসপাতালের লোকজনকে বলেছি তারপরও তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তারা পারবে না- এ বিষয়টি আমাকে বলেনি। তাদের অবহেলার কারণে আমার স্ত্রী রক্তক্ষরণে মারা গেছে। রক্তক্ষরণ শুরু হলে তারা আমাদের না জানিয়ে নিজেরাই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে যায়, সেখানে আমার স্ত্রী মারা যায়। আমি গরীব মানুষ, সবজির ব্যবসা করি। এখন মনটা খারাপ। পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। আমি এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক হারুণ অর রশিদ বলেন, আকলিমা ভর্তি হওয়ার পর তার সকল ধরনের পরীক্ষা করানো হয়েছিল। আমাদের কোনো সমস্যা নাই। আমাদের সকল কাগজপত্র ঠিক আছে। ডাক্তারের কোনো সমস্যা নাই। এ ডাক্তার আরও অপারেশন করেছে। অপারেশন করলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু অপারেশনের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় আকলিমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সেখানে সে মারা যায়।
অভিযোগ আসে চিকিৎসক ডা. তাবাসসুম ফেরদৌস নামের পাশে যে পদবি ব্যবহার করেছেন- এর মধ্যে একটি তথ্য ভুয়া। একই সঙ্গে সিজার করার মতো সরকারের পক্ষ থেকে সেই ডিগ্রি তিনি অর্জন করেননি।
হাসপাতালের চেম্বারে লেখা রয়েছে ডা. তাবাসসুম ফেরদৌস। তিনি এমবিবিএস, ডিএমইউ (আল্ট্রাসনোগ্রাম), পিজিটি (গাইনি অ্যান্ড অবস্), প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তিনি অনারারী মেডিকেল অফিসার, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ।
অনারারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডা. তাবাসসুম ফেরদৌস কর্মরত আছেন কি না জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার বলেন, এ নামে কোনো চিকিৎসক তাদের এখানে কর্মরত নেই। প্রতারণা করে নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এটি বড় ধরনের প্রতারণা। বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলবেন।
ডা. হেলিশ আরও বলেন, আমার মনে হয়, ডা. তাবাসসুম সিজার না করা ভালো ছিল। তার সিজার করা ঠিক হয়নি, উচিতও না। কারণ সেই অভিজ্ঞতা ও সরকারের পক্ষ থেকে তিনি অনুমোদনপ্রাপ্ত নন।
অভিযোগের বিষয়ে ডা. তাবাসসুমের ভিজিটিং কার্ডে দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বরেন, আমি অফিসের কাজে ঢাকা রয়েছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন আকলিমা আক্তার জানান, খবরটি জানার পর তার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালের আলো/এসএকে