নেইমার ফিল সেভেন্টিন

প্রকাশিতঃ 12:34 pm | February 02, 2025

স্পোর্টস ডেস্ক, কালের আলো:

সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে হাঁটা দূরত্ব আধা কিলোমিটারের মতো ১৪ তলা সমাধি ভবন, সেই একুমেনিকেল মেমোরিয়াল সিমেট্রির প্রথম তলাতেই শান্তিতে চিরঘুমে পেলে। তিনিই বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পরও যেন সান্তোসের কাছাকাছি থাকতে পারেন। সান্তোসের কিং পেলে কি এদিন শুনতে পেয়েছিলেন, এক প্রিন্সের প্রত্যাবর্তনে সেখানকার মানুষের হর্ষধ্বনি। অনুভব করতে পেরেছিলেন কি, তাদের আবেগ! দেখতে পেয়েছিলেন কি, সেই যুবরাজকে পরানো তাঁর পছন্দের সেই ১০ নম্বর জার্সিটি?

যখন হাজার বিশেক সমর্থকের সামনে এসে সেই ১০ নম্বর জার্সিটি পরে কান্নায় ভাসছিলেন নেইমার, তখন ওপর থেকে নিশ্চিত তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন পেলে। আসলে সাও পাওলোর প্রত্যেক ফুটবলারের কাছে সান্তোস একটি আবেগের নাম। গতকাল সেই ক্লাবে ১৫ বছর পর ফিরে এসে নেইমারও ভাসলেন আবেগ ও ভালোবাসার স্রোতে।

‘কিছু সিদ্ধান্ত আছে, যা ফুটবল বা যুক্তির সীমানার বাইরে। কিছু আছে প্রভাব বিস্তারি। স্বীকার করছি, জানুয়ারির শুরুতেও আমি কল্পনা করিনি, সান্তোসে ফিরব বা আল হিলাল ছাড়ব। আমি সেখানে খুশি ছিলাম, আমার পরিবারও খুশি ছিল। তবে এর পর কিছু ব্যাপার ঘটল এবং আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো। প্রতিদিনের অনুশীলনে আমি ভালো অনুভব করছিলাম না। তাই সান্তোসে ফেরার প্রস্তাব পেয়ে দ্বিতীয়বার ভাবিনি।’ মাইক হাতে কথাগুলো বলতে বলতেই যেন কৈশোরের সেই দিনগুলোতে ফিরে যান নেইমার।

১১ বছর বয়সে এই ক্লাবে পা রেখেছিলেন। ৬ বছর পর এখান থেকেই পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। চার বছরে সান্তোস এফসির হয়ে মোট ২২৫ ম্যাচে ১৩৬ গোল করেন। ২০১১ সালে কোপা লিবের্তাদোরেস চ্যাম্পিয়ন হয়, যা ছিল ৫০ বছরের মধ্যে সেই টুর্নামেন্টে সান্তোসের প্রথম শিরোপা। তার পরই তো ব্রাজিল থেকে বার্সেলোনা, প্যারিস, রিয়াদ হয়ে ফের সান্তোসে আসা।

‘নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে ফিরেছি আমি। এখানে পা রাখার পরই মনে হচ্ছে, যেন বয়স আবার ১৭ হয়ে গেছে।’ বছর বত্রিশের নেইমারকে এ সময় সতেরোর কিশোরের মতোই লাগছিল যেন। কখনও গ্যালারির দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে, কখনও মাটিতে চুমু খেয়ে, কখনও দুই হাত গোল সেলিব্রেশনের মতো ছড়িয়ে বারবার সান্তোসের দর্শকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। তাঁর জন্য রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল ক্লাবটি। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কনসার্টও আয়োজন করেছিল। আতশবাজি ও আলোর ঝলকানিতে মাঠে প্রবেশ করেন তিনি। দর্শকদের আবদারে ড্রিবলিং দেখানোর পর নেইমার বলতে থাকেন, ‘ম্যাচে এসব নান্দনিক সৌন্দর্য দেখানোর সাহসের ঘাটতি থাকবে না।’

নেইমারকে নিয়ে ‘দ্য প্রিন্স ইজ কামিং ব্যাক’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্লাবটি। যেখানে নেইমার বলেন, ‘কিং পেলে, আপনার ইচ্ছা আমার কাছে আদেশের মতো। সিংহাসন এবং মুকুট এখনও আপনার। আপনি চিরন্তন। আপনার এই ১০ নম্বর; পবিত্র এই জার্সিটি গায়ে জড়ানো আমার জন্য সম্মানের।’ ছয় মাসের জন্য সান্তোসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাঁর। এদিন সাও পাওলো থেকে বন্দরনগরী সান্তোসে হেলিকপ্টারে আসেন নেইমার। তাঁকে দেখার জন্য স্টেডিয়ামের বাইরেও হাজারখানেক মানুষ ভিড় করেন, যা দেখে পুরোনো সেই দিনে ফিরে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার।

কালের আলো/এসএকে