আসামিকে রিমাণ্ডে অমানবিক নির্যাতন : পুলিশ কর্মকর্তা সহিদুলকে তলব

প্রকাশিতঃ 4:19 pm | February 02, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

কলেজ ফুটবল প্রীতি টুর্নামেন্টের বিরোধের জেরে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র আয়াজ হককে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা মামলার আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসানকে অমানবিক নির্যাতনের ব্যাখ্যা দিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ কর্মকর্তা সহিদুল বিশ্বাসকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

আয়াজ হত্যা মামলার আপিল শুনানিকালে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

তিনি বলেন, আয়াজ হত্যা মামলার আসামি ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসানকে একাধিকবার রিমাণ্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহিদুল বিশ্বাস। নির্যাতনের কারণে তার পায়ে পচন ধরে যায়। সে তার স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে এখনও জেলে আছে জিসান। অকথ্য নির্যাতন করে তার থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। হাইকোর্টে এই মামলার আপিল শুনানি চলছে। শুনানিকালে আসামি জিসানকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে। এ কারণে পুলিশ শহিদুল ইসলামকে হাইকোর্ট তলব করেছেন।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর কলেজ ফুটবল প্রীতি টুর্নামেন্টের বিরোধের জের ধরে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র আয়াজ হককে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যার দায়ে একজনকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। আসামিরা সবাই সিটি কলেজের ছাত্র।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ইকবাল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে আসামি ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসানকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— তৌহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান আরাফ, তৌহিদুল ইসলাম শুভ, আবু সালেহ মো. নাসিম ও আরিফ হোসেন রিগ্যান।

রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা ইনজামামুন ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়। অন্যরা পলাতক।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৯ জুন সিটি কলেজের প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি ও খরচ বাবদ টাকা তোলার বিষয় নিয়ে আয়াজের বড় ভাই সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশদিন হকের সঙ্গে আসামিদের কথা-কাটাকাটি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই দিন বিকেলে ধানমন্ডি থানাধীন জিগাতলায় যাত্রীছাউনির কাছে আয়াজকে একা পেয়ে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করেন। আয়াজকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আয়াজ হত্যার ঘটনায় তার বাবা আইনজীবী শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৯ জুন ধানমন্ডি থানায় সিটি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছয় ছাত্র ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসান, তৌহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান আরাফ, তৌহিদুল ইসলাম শুভ, আবু সালেহ মো. নাসিম ও আরিফ হোসেন রিগ্যানের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর ২০১৫ সালের ১৩ মে ধানমন্ডি থানার এসআই সহিদুল বিশ্বাস ৪৭ জনকে সাক্ষী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের আদেশ দেন। বিচার চলাকালে আদালত ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

কালের আলো/এসএকে