রিটার্ন না দেওয়া টিআইএনধারীদের নোটিশ দেবে এনবিআর
প্রকাশিতঃ 9:18 pm | February 02, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকার পরও যারা দীর্ঘদিন রিটার্ন দাখিল করছেন না, তারা শিগগিরই নোটিশ পাবেন জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, যারা রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাদের কোনো সমস্যায়ও পড়তে হচ্ছে না। তাই আমরা এ বিষয়ে এনফোর্সমেন্টে যাচ্ছি।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক নীতি আলোচনা অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক ব্যবসায়ীই ভ্যাট চালান দিতে চান না। আমাদের নাগরিকরা বিদেশে গিয়ে আইন ভঙ্গ করছেন না। কিন্তু দেশে আইন মানেন না। তার মানে, এ সমস্যার সমাধান করতে আইনের প্রয়োগ করা হয় না, এটাই সমস্যা।
সম্মানিত অথিতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির মূলনীতি অনুযায়ী বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে, ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা বেশি হবে এবং তথ্য উন্মুক্ত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে বাজার কয়েকটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, প্রতিযোগিতাও নেই। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন ও সরকারেরও দায় আছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে উৎপাদক ও ভোক্তারা কেউই যৌক্তিক দামে পণ্য কিনতে পারছেন না। এর সঙ্গে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বড় অংশ কৃষক। এর মানে উৎপাদনে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার হচ্ছে, যা কৃষকদের ক্ষতি করছে। অথচ তারা সঠিক দামও পাচ্ছে না।
বাজারে মুক্তবাজার অর্থনীতির মূলনীতির কোনো অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাস্তবে মুক্তবাজার অর্থনীতি বলতে কিছু নেই, যা আছে তা অলিগোপলি। বেশিরভাগ বাজার ও পণ্য উৎপাদন কতিপয় গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।
তিনি আরও বলেন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বিবিএস (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) কার্যকরভাবে কাজ করছে না, মন্ত্রণালয়গুলোর নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে গেছে, সবকিছু একক কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এমনকি আদালতও ওপরের নির্দেশনা অনুযায়ী চলে, যা গত দেড় দশকে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
মূল্য প্রবন্ধে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খাদ্যস্ফীতি রোগের উপসর্গ মাত্র, এটা সমস্যা নয়। অনেক সময় উৎপাদন পর্যাপ্ত থাকার পরও বাজারে সংকট থাকে। চাহিদার হিসাবটাও আমাদের ঠিকঠাক করা হয় না। সরকারের ভেতরে তা থাকতে হবে। সরকারের কাছে ব্যাপক ও সমন্বিত তথ্য-উপাত্ত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বার্ষিক উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য হয়তো জানা আছে, কিন্তু প্রাত্যহিক উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য সরকারের জানা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশক ও সরবরাহের তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে না থাকলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের কাছেও এ তথ্য থাকে। এরকম একটা পরিস্থিতি দিয়ে সরকারের পক্ষে কখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন এ এইচ এম আহসান বলেছেন, বাজারের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। প্রকৃত সমস্যা হচ্ছে, প্রতিযোগিতার অপব্যবহার হচ্ছে কি না। প্রতিযোগিতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কাজ করাই আমাদের কাজ। কেউ অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে বাজার প্রভাবিত করছে কি না, সেদিকে দৃষ্টি রাখাও আমাদের কাজ। তবে সমন্বয়ের অভাবে আমাদের হাতে তথ্য নেই।
তিনি বলেন, আরেকটা আলোচনার বিষয় হলো সিন্ডিকেট নিয়ে। এটা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু এটা পরিচিত মনোপলি বাজার নামে। এসব নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কনক্লেভে প্রধান অতিথি হিসেব উপস্থিত আছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ ছাড়াও কনক্লেভে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বক্তব্য রাখেন।
কালের আলো/এএএন/কেএ