নোয়াখালীতে বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়লেন জামায়াত আমির
প্রকাশিতঃ 9:53 pm | February 03, 2025
নোয়াখালী প্রতিবেদক, কালের আলো:
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে (৪০) দেখতে আসেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নির্যাতিতা নারীর বাড়ি পরিদর্শন ও ওই নারীর সাথে আলাপচারিতা করেন তিনি। তারপর পথসভায় নির্যাতিতা সেই নারীর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে যে ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের ভাবলেই কষ্ট হয়। আমরা ওই সময় পাশে দাঁড়াতে পারি নাই। যদি আমরা সবাই দাঁড়াতাম তাহলে এমন হতো না। আজ যদি আমাদের সবার বোনের সাথে এমন হতো তাহলে আমরা কি করতাম? সারাদেশে এমন ঘটনা ঘটলেও এত নিকৃষ্ট ঘটনা কোথাও ঘটেনি।
এসময় আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তারপর তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে তাকে পুষিয়ে দেন। তার বিচার যেন আল্লাহ আখিরাতে করে। একজন মায়ের সম্মানের মূল্য আমাদের জীবনের চেয়ে বেশি। পশুরা বুঝলো না। এর কারণ মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে যায় তখন বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আল্লাহকে যারা দিলে স্মরণ রাখে তারা বেপরোয়া কখনও হতে পারে না। যে মানুষ আল্লাহকে ভয় করে তার দ্বারা মানুষ নয় পশুরও ক্ষতি হতে পারে না।
এসময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঞা, নোয়াখালী জেলা সেক্রেটারি মাওলানা বোরহান উদ্দিন, নায়েবে আমির মাওলানা সাইয়েদ আহমেদসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, আন্দোলনে নিহত শহীদ পরিবার ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই গৃহবধূকে (৪০) মারধর করে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ঘটনাটি ঘটায় তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসে। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননী। তার অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনার পরদিন ৩১ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
কী হয়েছিল সেদিন২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, নির্বাচনের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে এলাকার সবাইকে স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন পরদিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী ওই নারীও ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে ভোট দিতে যান। ভোটকেন্দ্রে যেতেই স্থানীয় কয়েকজন যুবক তার ভোট হয়ে গেছে বলে বাড়ি চলে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, আমি এতো কষ্ট করে টোকেন খুঁজে বের করে ভোট দিতে এসেছি। আমার ভোট দিতেই হবে। এ কথা বললে ওই যুবকরা আমাকে ভোট দিতে দেয়। তারপর ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখি একটি টুলের ওপর ব্যালট পেপার রাখছে। কোনো গোপন কক্ষও ছিল না। আমি ব্যালট হাতে নিয়ে ধানের শীষে সিল দিয়েছি। তারপর তারা আমার ব্যালট পেপার ভাঁজ করে দিতে চায়। আমি সেটা করতে না দিয়ে ব্যাটলটি বাক্সে রেখে চলে আসি।
এই নারী আরও জানান, রুহুল আমিন ও তার সঙ্গে থাকা যুবকরা ওই সময় তাকে দুই আঙুল দেখিয়ে কিছু একটা ইঙ্গিত দেয়। বিকেলে ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাড়িতে ঢুকে তার স্বামী ও ছেলেকে বেঁধে ফেলে। পরে তাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে।
১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস আলোচিত এ মামলার রায় দেন। এ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
কালের আলো/এসএকে