ভুয়া পাঠাগার খুঁজে বের করে বাদ দেওয়া হবে: ফারুকী
প্রকাশিতঃ 5:09 pm | February 04, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
আগামী অর্থ বছরের আগে বেসরকারি ভুয়া পাঠাগারগুলো খুঁজে বের করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের সিনেপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস- ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গ্রন্থাগার অধিদপ্তর।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, পাবলিক লাইব্রেরির কার্যক্রমের দিকে এর আগে গভীর মনযোগ দেওয়া হয়নি। পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ আছে। কিন্তু পাবলিক লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজেশন করার যথেষ্ট গোছালো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এটা এখন নেওয়া সময় এসেছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি, ই-বুকের কাজ চলছে৷ আমি মনে করি, এই কার্যক্রমটা আরও গোছালোভাবে করা উচিত। এর জন্য লক্ষ্য ঠিক করা উচিত। যত দ্রুত আমরা এটাকে একটি সন্তোষজনক অবস্থায় নিতে পারবো, তত দ্রুত আমরা পৃথিবীর বড় বড় লাইব্রেরির সঙ্গে সমন্বয় করতে পারবো। এটা করলে জ্ঞানের ভান্ডারটা অনেকর সঙ্গে ভাগ করে নেয়া যাবে।
ভুয়া পাঠাগারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সরকারি পাঠাগারের বাইরে যেসব বেসরকারি পাঠাগার রয়েছে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক, এই পাঠাগারগুলোকে কেন্দ্র করে ব্যাপকহারে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা তদন্ত করে এমন জায়গাও পেয়েছি, যেখানে লাইব্রেরি বলে কিছু নেই, কিন্তু সে ৭-৮ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে। এটা আসলে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা তাদের কাছের লোকদের দিয়েছেন। এমনিতেই আমাদের (সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়) বরাদ্দ খুব কম, তার ওপর ভুয়া পাঠাগারের জন্য সত্যিকারের পাঠাগারগুলো খুবই অল্প পরিমানে অর্থ পায়।
তিনি আরও বলেন, আগামী অর্থ বছরের আগে ভুয়া পাঠাগারগুলো তদন্ত করে খুঁজে বের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের সার্ভে অনুযায়ী সত্যিকারের পাঠাগারের সংখ্যা ৫০০-৬০০টি। আমরা চাই এটা আরও তদন্ত হোক। ভুয়া পাঠাগার কমে এলে সত্যিকারের পাঠাগারগুলোর বরাদ্দ বাড়বে।
এ সময় তিনি ফিজিক্যাল গ্রন্থাগারের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। দিবসটি সফল হোক।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমা বলেন, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ উদযাপিত হবে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সমৃদ্ধ হোক গ্রন্থাগার এই আমাদের অঙ্গীকার’। জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্র-বিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকাকে দৃঢ় করাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার বিনির্মাণে আমাদের করণীয়’ বিষয়ে এবং গ্রন্থাগার দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্বের ওপর এক বিশেষ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম। মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আলম।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসন, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি, বাংলাদেশ গ্রন্থাগারিক ও তথ্যায়নবিদ সমিতি, বেসরকারি গণগ্রন্থাগার সমিতি, বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পেশাজীবী, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একযোগে দিবসটি পালন করবে। ঢাকার বাইরে সব জেলায় স্থানীয় জেলা প্রশাসন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচি অনুযায়ী দিবসটি উদযাপন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক নাফরিজা শ্যামা।
কালের আলো/এমডিএইচ