সমৃদ্ধ ফুলবাড়িয়া গড়তে ‘জনবান্ধব’ ইউএনও আরিফুল ইসলামের মিশন
প্রকাশিতঃ 7:46 pm | February 04, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ:
সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলা ও দুর্নীতি অনিয়মসহ নানা অভিযোগ হরহামেশাই শোনা যায়। আবার এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। এক্ষেত্রে সৎ, দায়িত্বশীল ও জনবান্ধব কর্মকর্তার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তাঁরা লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলেন সাধারণ জনগণ ও বিপদগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে। তেমনই একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম। নিজের কর্মস্থল ফুলবাড়িয়া উপজেলাকে একটি সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন যিনি। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে ফুলবাড়িয়ায় যোগদান করার পর খোলনলচে পাল্টে দিচ্ছেন হলুদ ও লালচিনির জন্য বিখ্যাত এই উপজেলাটিকে।
জানা যায়, আরিফুল ইসলাম ফুলবাড়িয়ার ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকেই সরকারের সার্বিক উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলার সরকারি অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখেছেন। উপজেলার বিশিষ্টজনের কাছ থেকে লব্ধ ইতিবাচক পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করেন। উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত জনসম্পদ বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষাকে প্রধান্য দেওয়াসহ কৃষির ব্যাপারে দেশীয় কৃষিজাত কৃষি উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা, নারীদের উন্নয়নে আয়বর্ধক কাজে কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করছেন। যাতে করে তাঁরা নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারে। সরকারি সেবা প্রদানে তিনি সঠিকভাবে কার্যকর ভূমিকা নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। উপজেলার অবৈধ জমি, খাল, পুকুর ইত্যাদি দখল মুক্ত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সকলের সহযোগিতায় এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে ফুলবাড়িয়াকে সমৃদ্ধ ও আলোকিত উপজেলা হিসেবে গড়তে চান ইউএনও আরিফুল ইসলাম।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে- যোগদানের এক মাসেই তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকাণ্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। ফুলবাড়িয়া উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি বদ্ধপরিকর।জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করছেন উপজেলার জনসাধারণ থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
দেখা গেছে, সবক্ষেত্রেই রয়েছে এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার রয়েছে সদর্প পদচারণা। দাপ্তরিক কাজের বাইরে সকাল-বিকাল ছুটে বেড়ান উপজেলার নানা প্রান্তে। কথা বলেন উপজেলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে। শোনেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। খোঁজখবর নেন সমাজের অবহেলিত গরিব-দুঃখী মানুষের। পরিদর্শন করেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলার নানা উন্নয়ন প্রকল্প। কোথাও কোনো সমস্যা দেখলে নেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। তাছাড়া গণমাধ্যম, ফেসবুক, মুঠোফোন ও ই-মেইলের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, সন্ত্রাসমুক্ত, উন্নয়নমুখী ও আলোকিত ফুলবাড়িয়া গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ইউএনও আরিফুল ইসলাম জানান, ফুলবাড়িয়া উপজেলা নানা কারণে বিখ্যাত। এখানে অনেক জ্ঞানী ও গুনী লোকের বাস। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন প্রয়োজন। তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি বেসরকারি সেবা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ফুলবাড়ীয়া উপজেলার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েব পোর্টালে ফুলবাড়িয়া উপজেলার সকল সরকারি অফিসসহ ব্যাপক তথ্য সন্নিবেশিত করার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। পোর্টালটি সাধারণ জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন করেন আরিফুল ইসলাম।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা ময়মনসিংহ জেলায় একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নে রয়েছে ১০টি বিভিন্ন প্রকারের রাইড নিয়ে নির্মিত একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র ও পিকনিক স্পট আলাদিনস্ পার্ক। এখানে উন্নতমানের ওয়াটার রাইড ও সুইমিং পুল রয়েছে। এর ভেতরে একটি ছোট চিড়িয়াখানাও রয়েছে। এই উপজেলায় রয়েছে দেশের একমাত্র অর্কিড বাগান। উপজেলার সন্তোষপুরে রয়েছে রাবার বাগান। প্রায় ১০৬ একর জমি নিয়ে যেটি অবস্থিত। রাবার বাগান থেকে সংগ্রহ করা রাবার প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করে সরকার অনেক রাজস্ব আয় করে থাকে। এসব বিভিন্ন কারণে ফুলবাড়িয়া একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। সরকারের নিয়ম নীতি মেনেই ফুলবাড়িয়াকে জনবান্ধব প্রশাসন হিসেবে গড়ে তুলতে চান ইউএনও আরিফুল ইসলাম। আর এজন্য সাংবাদিকসহ উপজেলার সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
উপজেলায় বিভিন্ন জনদুর্ভোগ লাঘবে ইউএনও আরিফুল ইসলামের সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রশংসা করেন স্থানীয়রা। তাদেরই একজন উপজেলার জোরবাড়িয়া ইছাইলবিল এলাকার কাজী আবু তাহের। তিনি বলেন, ২০২০ সাল থেকে সাবেক ম্যানেজার শাহাবুদ্দিন এর সাথে গভীর নলকূপের মালামাল নিয়ে উভয়পক্ষের মাঝে মামলা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ কারণে গভীর নলকূপটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের এলাকার প্রায় ৪৮ একর জমি চাষাবাদ করতে পারেনি স্থানীয় কৃষকরা। এতে কৃষি জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকলেও পূর্ববর্তী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। গত ২ থেকে ৩ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান ইউএনও আরিফুল ইসলাম কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এর সুষ্ঠু সমাধান করার ফলে এই বছর আমরা গভীর নলকূপটি চালানোর অনুমতি পেয়েছি। কৃষকরা এবার জমিতে চাষাবাদের সুযোগ পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
ফুলবাড়িয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা, কর্মরত সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ব্যবসায়ী এনজিও প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে উপজেলার যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভুমিসেবাসহ সকল সেক্টরের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই উপজেলাটিকে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ উপজেলায় রূপ দিতে আন্তরিক কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন বিসিএস ৩৬ ব্যাচের মেধাবী এই কর্মকর্তা। শুরু থেকেই তিনি অঙ্গীকার করে নিয়েছিলেন কোন অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার। তিনি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, সেবা নিতে আসা মানুষ যাতে কোনভাবে হয়রানির শিকার না হয়। সেজন্য দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হবে।
জানতে চাইলে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের স্বপ্ন পূরণে ও ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে ময়মনসিংহের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা ‘সমৃদ্ধ ফুলবাড়িয়া’র অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছি। এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সম্মানিত নাগরিক থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।’
কালের আলো/এমএসএকে