‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন 

প্রকাশিতঃ 5:49 pm | February 05, 2025

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কালের আলো:

জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্র করে ২৫টি শীর্ষ জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ডকুমেন্টস আকারে প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইটির লেখক আহম্মদ ফয়েজ।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। মোড়ক উন্মোচনকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ বইটিতে জুলাই অভ্যুত্থান ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্বলিত প্রথম পৃষ্ঠা তুলে ধরা হয়েছে। বইটি পড়লে অভ্যুত্থানে কোন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা ইতিবাচক বা নেতিবাচক ছিল সেটা জানা যাবে।

আদর্শ প্রকাশনার প্রধান নির্বাহী মাহবুব রাহমান বলেন, অভ্যুত্থানের সময় অধিকাংশ গণমাধ্যম সরকারের পক্ষে কাজ করেছে। মাঠে একটা ঘটনা হতো, আমরা গণমাধ্যমে ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতাম। এতে আমাদের বিভ্রান্ত হতে হতো। মুষ্টিমেয় গণমাধ্যম যতটা সম্ভব ততটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। আর সেই কাজকে সুন্দরভাবে ডকুমেন্টেশন করেছেন আহম্মদ ফয়েজ। বইটি হয়ত শত বছর পরও একটা ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ৫ আগস্টের পূর্বে অনেক সাংবাদিক, পত্রিকার সম্পাদকরা সরকারের চাটুকারিতা করেছে ফলে সেসময় তারা সংবাদপত্রে তথ্য ছাপায়নি। অনেকে কম লিখেছে, কেউ প্রথম পাতায় লেখেনি আবার কেউ তথ্য গোপন করে সরকারের পক্ষে লিখেছে। কিন্তু আমরা একদল ছাত্র-জনতার মাধ্যমে রক্ত দিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছি। আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে কিন্তু আমরা যেন এই রক্তের ইতিহাস থেকে বিচ্যুত না হই।

বইয়ের লেখক এবং প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহম্মদ ফয়েজ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যখন পাখির মতো মানুষ হত্যা করা হচ্ছিলো তখন আমি দেখছিলাম গণমাধ্যমের ভূমিকা কি। তখন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা দেখে ভেবেছিলাম এটা আমাদের কাজ হতে পারে না। সেই তাগিদ থেকেই আমি গণমাধ্যমের ভূমিকাকে প্রকাশ করতে বই আকারে ছাপানোর চিন্তা করি। ভবিষ্যতে ইতিহাস আড়াল করতে যেন কেউ না পারে সেজন্য আমি এই কাজটা করি। ভবিষ্যতে ইতিহাস লেখা হলে অনেক সংবাদমাধ্যমকে মুখ লুকাতে হবে। আশা করি পাঠক অভ্যুত্থান কেন্দ্রিক গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সত্য ইতিহাস জানতে পারবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ১৯৭২ এর পরে আমাদের ডকুমেন্টেশনে অনেক খারাপ ছিল। ফলে সেসময় যারা ভিলেন ছিল তাদের অনেকে হিরো আবার যারা হিরো ছিল তারা ভিলেন হয়ে গিয়েছিলো। স্বাধীনতার ৬ মাস পরেই পত্রিকাগুলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা বাদ দিয়েছিলো। তখন এমন পরিস্থিতি ছিল মানুষ যুদ্ধ নিয়ে ভাবা তো পরে, তারা আগামীকাল কি খাবে তা নিয়েই ব্যস্ত ছিল।

তিনি বলেন, ২৪-এর আন্দোলন মহৎ একটা আন্দোলন ছিল যার ডকুমেন্টেশন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। বই লেখা হচ্ছে, অনলাইনে ডকুমেন্টেশন করা হচ্ছে। গ্রাফিতি আঁকা হচ্ছে, ভিডিওগুলো ডকুমেন্টেশন করা হচ্ছে। এই গণহত্যা কারা করেছে এগুলো ওয়েল ডকুমেন্টেড। কারো পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা জানি, এই আন্দোলনে কার কি ভূমিকা ছিল। আহম্মদ ফয়েজ যে ভালো কাজ করে যাচ্ছে সেটা অত্যন্ত চমৎকার একটি কাজ। আমি চাই বইটি সবার হাতে হাতে পৌঁছে যাক। সুদূর ভবিষ্যতে এই বইটি অনেক গুরুত্ব বহন করবে বলে প্রত্যাশা রাখি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালালে ভারতকে দায় নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, এটা নিয়ে তাদের বক্তব্য রয়েছে। আমরা সেটা তাদের থেকে জানতে চাই। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা যদি ভারতে বসে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায় তার দায় ভারতকে নিতে হবে। এবং অবশ্যই এই কর্মকাণ্ডের দায় হিসেবে আমরা ভারতের কাছ থেকে জবাবদিহিতা চাইবো।

ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ছাত্র-জনতা মাঠে থাকবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, তারা ভারতে ভয় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আমরা বলতে চাই, আতঙ্ক ছড়িয়ে লাভ নাই। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ছাত্র জনতা মাঠে আছে, মাঠে থাকবে।

আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্দোলনে সংবাদমাধ্যমগুলোর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ভূমিকাই ছিল। ১৪ তারিখ পর্যন্ত কোটা আন্দোলনই ছিল। ১৬ তারিখ থেকে সেটা সরকার পতনের আন্দোলনে দিকে ধাবিত হওয়া শুরু করে। এরপর পত্রিকাগুলো নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করে। অনেকে অনলাইন থেকে তাদের রিপোর্ট সরিয়ে নিলেও পত্রিকাগুলো আমরা আর্কাইভ করার ব্যবস্থা করে রাখি।

তিনি বলেন, ডিজিএফআই পত্রিকাগুলো চালাতো, তারা আমাদের বিরুদ্ধে লিখতে বাধ্য করতো। সেসময় যেসব গণমাধ্যম সরকারের পক্ষে কাজ করেছে, সেটা বাধ্য হয়ে বা আদর্শিক কারণেই হোক সেই বক্তব্য তারা প্রকাশ করছে না। আমি মনে করি, নৈতিক কারণেই তাদের বক্তব্য প্রকাশ করা উচিত। এতে মানুষের হারানো বিশ্বাস হয়ত কিছুটা ফিরে আসবে। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক সমালোচনা করেই যাচ্ছে। আমি চাইবো, আমরা ছোটখাটো বিষয়ে বিভেদ না করে আমাদের লড়াইকে পূর্ণভাব ব্যাখ্যা করবো৷

এ সময় তিনি ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক বই প্রকাশের জন্য আহম্মদ ফয়েজ এবং আদর্শ প্রকাশনীকে ধন্যবাদ জানান।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক (ডিজি) ফারুক ওয়াসিফ, কবি এবং সাংবাদিক সালাউদ্দিন শুভ্র প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কালের আলো/এমডিএইচ