রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাচনে জনমতে এগিয়ে নওয়াব আলী

প্রকাশিতঃ 2:54 pm | March 23, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

রাত পোহালেই রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। বহুল কাঙ্খিত এই নির্বাচনে ভোট বিপ্লব ঘটানোর অপেক্ষায় রয়েছেন ভোটাররা। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিহীন এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে মূলত দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে।

তাঁরা হলেন- দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম নওয়াব আলী ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শেষ হাসিটা হাসতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নওয়াব আলী। ভোটের লড়াইয়ে শেষ মুহুর্তের জনমত জরিপে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন ভোট বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, তৃতীয় ধাপে আগামী ২৪ মার্চ রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন স্থানীয় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এস এম নুওয়াব আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়াই করছেন।

দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে পছন্দ হয়নি বেশিরভাগ নেতা-কর্মীদেরই। কিন্তু জনপ্রত্যাশা ধারণ করে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন এস এম নওয়াব আলী। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের হ্যাট্টিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

টানা ৪২ বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। তাঁর স্ত্রী সাহানা বেগম সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য। এসব কারণে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কিন্তু প্রার্থীতার বেলায় কেন্দ্র তৃণমূলকে খুশি করতে না পারায় এখন সব হিসাব-নিকাশেই খোশ মেজাজেই রয়েছেন নওয়াব আলী।

দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, নওয়াব আলী দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত রাজনীতিক। ২০০৩ সালে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় ব্যাপক শারীরিক নির্যাতনের মুখে পড়েন নওয়াব। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে নানাভাবে হয়রানির মুখে পড়েন।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি’র নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক জাহানারা বেগমের নির্দেশে তাঁর ওপর গুলি বর্ষণ করা হলে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। ওয়ান ইলেভেনে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সাময়েও শিশার ঢালা প্রাচীরের ন্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখেন। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের সব ভোট তাঁর বাক্সে পড়ার সম্ভাবনাই উজ্জ্বল বলেই মনে করেন দলটির বেশিরভাগ নেতা-কর্মী।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আরো বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে নতুন ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। তারা এমন একজনকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান, যার সঙ্গে তারা কথা বলতে পারেন। কাজ করতে পারেন। মিশতে পারেন; যিনি প্রযুক্তি বোঝেন। মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন।

নতুনদের এই প্রত্যাশার জায়গায় অবস্থান করছেন নওয়াব আলী। তিনি সবার সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন। মানুষ তাকে ভালোবাসে। পছন্দ করে।’

ইতিবাচক প্রত্যাশার কথা জানিয়ে নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে একাধিক নেতা কালের আলোকে বলেন, রাজবাড়ী সদরের মানুষ এবার দোয়াত কলমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রকৃত অনুসারীকে ভোট দেবে। আমরা নওয়াব আলীকে নিয়ে আশাবাদী। সততার রাজনীতিতে তিনি অনুকরণীয়। মূলত বড় এই গুণের কারণেই দলমত নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। যা তাঁর জয়কে সহজ করবে। এখন পর্যন্ত তাঁর জয়ের পাল্লাই ভারী।’

এদিকে, এই উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এক রকমের শঙ্কা কাজ করছে। তবে রাজবাড়ী জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে ভোটারদের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহবান জানিয়েছেন। তাঁরা ১৪ ইউনিয়নেই সভা করে সুষ্ঠু ভোটের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ফলে স্বতস্ফূর্ত মানুষ উন্মুখ হয়ে আছেন ভোট দিতে।

অন্যদিকে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস জানান, তিনি ভোটারদের ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন। তাঁর পাশে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ভোটাররা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে ভোটাররা সৎ, যোগ্য ও মানুষের জন্য নিবেদিত ব্যক্তিকেই ভোট দেবে।

কালের আলো/এমএস/ওএইচ