ধানমণ্ডি ৩২-এ আগুন-ভাঙচুর: বিবৃতিতে যা বলল প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 6:20 pm | February 06, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ছাত্র-জনতার আগুন দেওয়া ও ভাঙচুর করার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে এই ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রয়ারি ) বিকালে এই বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, ধানমণ্ডি ৩২-এ আগুন ও ভাঙচুরের মাধ্যমে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি। গতকাল (বুধবার) রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে, যার দুটো অংশ আছে। একটা অংশ হলো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদের অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধমকির সুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব বলেও বিবৃতে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না। জুলাই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বিচার নিশ্চিত করে গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা সরকার খতিয়ে দেখবে।

এর আগে বুধবার রাত ৯টায় ভারতে বসে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ঠিক সে সময় থেকেই ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, যেখানে পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন শেখ মুজিবুর রহমান।

একপর্যায়ে বাড়িটিতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রেন ও এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ির সবকিছু। সেখানকার দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায় উপস্থিত ছাত্র-জনতা। যার ফলে ধানমণ্ডি-৩২ এর পুরো বাড়িটি একটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

কালের আলো/এএএন/কেএ