জুলাই বিপ্লবের স্বাধীনতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 1:52 pm | February 08, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত নব্য স্বাধীনতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সাভারের বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সাহাবুদ্দিন আহমেদ এর মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতাবলে এই সমাবর্তনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী এবং দৃঢ়। দারিদ্র ও বৈষম্য দূরীকরণ এখনও আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দারিদ্র্য দূরীকরণে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের নব্য স্বাধীনতা। সামাজিক বৈষম্য, ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতা, পশ্চাৎপদতা, ইত্যাদির দূরীকরণ এবং সুখী-সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গড়ে তোলার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই অর্জনের অঙ্গীকারই বাংলাদেশ আপনাদের (শিক্ষার্থীদের) কাছ থেকে আশা করে। জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই আপনারা (শিক্ষার্থীরা) ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। সততা, কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে আপনারা (শিক্ষার্থীরা) গড়ে তুলবেন সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ

অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান,  উপাচার্য প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন। এতে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ড. হাসান দিয়াব কনভোকেশন স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেন।

এবারের সমাবর্তনে ৩ হাজার ৯৫১ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১২ জন গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর, চেয়ারম্যান ও উপাচার্যসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘স্বর্ণপদক’ প্রদান করেন। উপদেষ্টা সমাবর্তন পদযাত্রায়ও অংশ নেন।

সমাবর্তনে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন- ফার্মেসি বিভাগের আবু ফারহান সিয়াম, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জাবেদ হাসান, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হুমায়রা আসিমা মিম, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাশুর সাদ করিম এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আশিকুল হক।

উপদেষ্টা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদসহ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মূলত. তাদের অবদানে আমরা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে।

উপদেষ্টা সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দেশের সম্পদ, দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানদের একাংশ। আপনাদের আগামী দিনের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি। দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। নিজেদের মেধা, শিক্ষা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আপনাদের বিশ্বমানের মানবসম্পদে পরিণত হতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং দক্ষ মানবসম্পদ অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ততদিন দেশ উন্নত হবে না যতদিন পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য, দেশের অর্থনীতির হাল ধরার জন্য, পর্যাপ্ত সংখ্যক জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রকৃত উচ্চশিক্ষিত নাগরিক আমরা সৃষ্টি করতে না পারি।

নবীন স্নাতকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের জন্য, দশের জন্য, নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে, ভালো মানুষ হয়ে, মানবিক মানুষ হয়ে বিশ্বসভায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে। তরুণরাই এ দেশে একটি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আপনাদের উদ্যোগেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকারও বাক স্বাধীনতার।

তিনি বলেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করা। প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। বর্তমান যুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আধুনিক বিশ্বমানের শিক্ষা ও জ্ঞান প্রযুক্তিতে দক্ষ, নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

কালের আলো/এমডিএইচ