যততত্র ময়লা নিক্ষেপকারীকে জেলে পাঠাতে বললেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম
প্রকাশিতঃ 4:39 pm | February 08, 2025
![](https://www.kaleralo.com/wp-content/uploads/aysg-e1739011210580.webp)
চট্টগ্রাম প্রতিবেদক, কালের আলো:
যততত্র ময়লা নিক্ষেপকারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে দু’য়েকদিনের জন্য জেলে পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মতামত তুলে ধরেন। সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বহুমুখী কাজ করতে পারে। শহরে যেসব পরিবার সবকিছু মেনে ট্যাক্সের টাকা দিচ্ছে, সেখানে বর্জ্য অপসারণের টাকাও আছে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার টাকাও আছে, সবকিছুই এটার মধ্যে আছে। সুতরাং হান্ড্রেড পার্সেন্ট যারা কমপ্লায়েন্স ফলো করবে, তাদের আমরা অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারি, পুরস্কৃত করতে পারি। আর এগুলো যারা মান্য করবে না, তাদের তিরস্কার এবং আইনের আওতায় আমরা নিয়ে আসতে পারি।’
‘এ প্রক্রিয়ায় সামগ্রিকভাবে জনমানুষের মধ্যে আমরা একটা ধারণা তৈরি করতে চাই যে, ময়লা যত্রতত্র ফেলা যাবে না, এটার জন্য মোবাইল কোর্ট করে ফাইন হয়। আমরা টাকার ফাইনে না গিয়ে দু’য়েকদিনের জন্য জেলও দিতে পারি, এটা মোবাইল কোর্ট করে। ডকুমেন্টেশনও করা যেতে পারে, কারা ময়লা ফেলছে, মোবাইল ফোনে যদি তাদের ছবি রেকর্ড করে রাখা যায়, আগে নোটিশ করে তারপর…। প্রথমে বলছি যে অ্যাওয়ারনেস ক্রিয়েট করা, তারপর পানিশমেন্ট। ধীরে ধীরে এগুলো যদি প্রয়োগের পর্যায়ে যাওয়া যায়, তাহলে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসব ক্ষেত্রে হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ময়লা নিষ্কাশন এবং যত্রতত্র ময়লা নিক্ষেপ ইত্যাদি নিয়ে আগামী রোজার আগে আমি আশা করছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ে আমরা যদি বড় ধরনের একটা সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম দিতে পারি, তাহলে এটা অনেক বড় একটা কাজ দেবে।’
নগরীর খালগুলোকে আবর্জনামুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘খালগুলো নিয়ে যারা কাজ করছেন, সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য কাজ করছে। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি, সিটি করপোরেশন যে বারইপাড়া খাল খনন করছে, এর সঙ্গে সংযুক্তির জায়গাটা আমরা দেখে এসেছি, উনারা (সেনাবাহিনী) এটা করে দেবেন বলেছেন, এটাতে অনেকটুকু (জলাবদ্ধতা) লাঘব হবে বলে আমি মনে করি। এটাও একটা অগ্রগতি।’
‘এরপর শহরের আরেকটা অগ্রগতি আমার চোখে পড়েছে। আগে রাস্তাঘাট যেভাবে ময়লা অধ্যুষিত ছিল, এখন অনেকটাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এটা ইমপ্রুভমেন্টের লক্ষণ। হয়তো আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রামে এলে আমরা দেখতে পাব যে, এটা আরও বেশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শহর হয়েছে।’
জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য প্রতিসপ্তাহে একজন উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আসবেন বলে জানান ফারুক-ই-আজম। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদে আমরা চারজন উপদেষ্টা এটার দায়িত্বে আছি। প্রতি সপ্তাহে আমরা একজন উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আসবো, শুধু আপনাদের সাথে থাকার জন্য। এটা এই নয় যে, আপনাদের কাজের ফিরিস্তি নেয়ার জন্য আমরা আসবো। আমরা আসবো সতত যেন আমরা এ কাজের মধ্যে মনোনিবেশ করতে পারি এবং সীমাবদ্ধতাগুলো সময়ের মধ্যেই যাতে আমরা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারি। আমরা সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে আমরা একটা দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে পারবো।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের সংকট সরকার কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত বাজেটে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে আমরা আছি। এটা নানাদিকে আমাদের ম্যানেজ করতে হচ্ছে। তারপরও আশা করছি, যেহেতু চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা উপদেষ্টা পরিষদে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে, আপনারা যেভাবে ফান্ড এলোকেশন চেয়েছেন, সেভাবে না হলেও ফান্ডের একটা ফ্লো থাকবে।’
‘অনেককিছুই আমাদের করণীয় আছে, আমরা শুরু করেছি, আমাদের এই ধারাবাহিকতাটা যেন কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয়। এই যে আমাদের মধ্যে ঐক্য হয়েছে, কর্মে নিয়োজিত করার জন্য আমরা যেভাবে সচেষ্ট হয়েছি, এটা যেন কোনোভাবেই ব্রেক না হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সংযোগের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, এটা নিয়েই আমি ঢাকায় যাচ্ছি, ঢাকায় আমরা আলোচনা করবো। আমাদের কথা হচ্ছে, কাজের অগ্রগতি আমরা দৃশ্যমানভাবে দেখতে চাই,’- বলেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
সভায় চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অর্থ বরাদ্দে মন্ত্রণালয়ের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার বিষয়টা যদি বলি, অতীতে অনেক অনিয়ম হয়েছে। বড় অনিয়মটা তো ২০১৬ সালে হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কাজটা সিটি করপোরেশনের, অথচ এটা সিডিএর কাছে চলে গেছে। একপর্যায়ে কিন্তু এটা সিটি করপোরেশনকেই বুঝিয়ে দিতেই হবে। তখন লোকবল, যন্ত্রপাতি- এগুলো কিন্তু সিটি করপোরেশনকেই ম্যানেজ করতে হবে।’
‘মেইনট্যানেন্সের জন্য লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেয়া, এটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দেখতে হবে, কোন কোন খাতে কত লোকবল লাগছে, যন্ত্রপাতি কোথায় কী লাগছে। এই যে স্লুইচগেটগুলো, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজও আলটিমেটলি সিটি করপোরেশনকে করতে হবে। এটার জন্য সিটি করপোরেশনকে একটা বড় বাজেট তৈরি করতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা খাতে সিটি করপোরেশন তো কোনো বাজেট পায়নি, এটা তো সত্য। বাজেট আমাদের দরকার। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে এই যে ড্রেন-নালাগুলো পরিস্কার করার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হবে। কথা হচ্ছে, বাজেট নেই কিন্তু এখন আমি কিভাবে কাজ করছি ? হোল্ডিং ট্যাক্সসহ আরও নানাভাবে যে টাকাটা আমি পাই, মাসে ৩২ কোটি টাকা আমাকে কর্মচারীদের দিতে হয়, ওখান থেকে কিছু কিছু দিয়ে আমি কাজ করছি। আমি বুঝতে পারি না, কেন্দ্র থেকে টাকা দিতে সমস্যা কোথায় ?’
ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পার্মানেন্ট সলিউশন হচ্ছে, ময়লাটাকে সম্পদে পরিণত করা। আমি এটা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকেও বলেছি যে, চট্টগ্রামে ওয়েস্ট প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট প্রকল্প গ্রহণ করা হলে নগরবাসীর সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ ও সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।’
সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ আরও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এর আগে, সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম নগরীর আগ্রাবাদ বেপারিপাড়া এলাকায় খাল খনন কার্যক্রম পরিদর্শনে যান।
কালের আলো/এএএন/কেএ