ম্যারাথনে দেশ-বিদেশি দৌড়বিদদের জীবন্ত এক ছবি, তরুণ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারায় উদ্ধুদ্ধ করতে চান সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 11:27 pm | February 08, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

মাঘের শীত আর কুয়াশার আড়মোড়া ভেঙে তখনও জেগে ওঠেনি ইট-পাথরের যান্ত্রিক রাজধানী। আলস্যের চাদর অবমুক্ত করে কুয়াশার জাল চিরে এই সময়টিতে রাজধানীর প্রগতি সরণি যেন হয়ে ওঠলো ঘুমন্ত নগরীকে জাগিয়ে তোলা সাইরেন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঘড়িতে তখন ভোর ৫ টা। জোড়া জোড়ায় পা পড়তে শুরু করে নগরীর পথে। এক পা দু পা করে সামনের দিকে এগোতে থাকেন দেশ-বিদেশের ১০ হাজার ১২৭ জন দৌড়বিদ। শীতের সকাল ভিন্নরকম এক রূপেই তারা ধরা দিলেন তাঁরা।

কোন আলসতা নেই। শীতল হাওয়াকে উবে দিয়ে কুয়াশার চাদর পেরিয়ে ছন্দ আর গতিময়তায় তাঁরা ছুটে চললেন ৩০০ ফিট সড়কে। সবার গন্তব্য কাঞ্চন ব্রিজের আগ পর্যন্ত। আবার একই সড়কে ফিরলেন প্রগতি সরণিতে। সবশেষে কেউ হন প্রথম, কেউ আবার শেষ। কোন রূপকথার রাজ্য নয়। সম্মিলিত দেশ-বিদেশের দৌড়বিদদের জীবন্ত এক ছবি। বিশালতার উপমায় যেখানে সমস্বরে সবাই গেয়ে উঠলেন জীবনের জয়গান। এমন সফল রূপায়নে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি বছরের ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫।

রাজধানীর ৩০০ ফিটে এদিন সূচনা হয় এই ম্যারাথনের প্রথম দৌঁড়ের। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘রান ফর ইউনিটি, রান ফর হিউম্যানিটি’। এখন পর্যন্ত দেশে আয়োজিত ম্যারাথনের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় কোন আয়োজন, যেখানে ১০টি দেশের বেশ কয়েকজন বিদেশি ম্যারাথনার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সবমিলিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন ৯ হাজার ৭৬০ জন পুরুষ ও ৭৬৭ জন নারী। ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ আয়োজন ও সম্পন্ন করে সক্ষমতার জ্যোতির্বলয়ে নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাঙালি জাতিসত্ত্বা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপনের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আত্মার স্পন্দনে স্মৃতিরেখায় নিজেদের তাঁরা উদ্ভাসিত করলেন আপন আলোয়।

একটি সুস্থ জাতি পেলে দেশের জন্য বড় কাজে দেবে
ম্যারাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, ‘এই ম্যারাথন শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি বিশ্বব্যাপী সংহতি ও সুস্বাস্থ্যের বার্তা বহন করছে।’ ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই। একটি সুস্থ জাতি পেলে দেশের জন্য বড় কাজে দেবে।’

তিনি ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী সকল দেশি-বিদেশি দৌড়বিদদের এবং এই আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। আন্তর্জাতিক ম্যারাথনের পাশাপাশি এই ধরনের ম্যারাথন বড় বড় শহর ও জেলা শহরে আয়োজন করা হবে।’

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, ‘আমার একটা সুন্দর ম্যারাথন করলাম। এখানে ১০ হাজারের ওপরে দৌঁড়বিদ ছিলেন দেশি ও বিদেশি। এখানে উদ্দেশ্য জয়-পরাজয় নয়। উদ্দেশ্য ছিল, দেশ ও জাতিকে ফিজিক্যালি অন্তর্ভুক্ত করা। আজ যে সাড়া পেয়েছি, আমরা অভিভূত। পরবর্তী সময়েও এই ধরনের ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে।’

ম্যারাথনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সংযুক্ত করার উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ-কাল তরুণরা শারীরিক কার্যকলাপে খুব বেশি সচেতন না। আগের মতো খেলার মাঠ নেই, দৌড়ঝাঁপও কমে গেছে। খেলাধুলায় সুযোগ-সুবিধাও কম গেছে। এ জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সংযুুক্ত করার।’

একরাশ সজীব স্বপ্নের এক অনবদ্য মিলনমেলা
এর আগে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধান অতিথি হিসেবে ভোরের আলো ফুটার আগে শিশিরমাখা ও শিরশিরে বাতাসে দেশ-বিদেশের দৌড়বিদদের একরাশ সজীব স্বপ্নের এক অনবদ্য মিলনমেলার উদ্বোধন করেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। ম্যারাথনটি ঢাকার ৩০০ ফিট সড়কের পাশে অবস্থিত নৌবাহিনীর ঘাঁটি হতে শুরু হয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে একই রাস্তায় ফেরত এসে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে এসে শেষ হয়।

ম্যারাথন শেষে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীমসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন স্পন্সররা উপস্থিত ছিলেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ফুল ম্যারাথনে পুরুষ বিভাগে মো: আল-আমিন এবং মহিলা বিভাগে পাপিয়া খাতুন প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করেন। হাফ ম্যারাথনে পুরুষ বিভাগে মো: আশিক আহমেদ এবং মহিলা বিভাগে রিঙ্কি বিশ্বাস প্রথম হয়েছেন। এছাড়াও ১০ কিলোমিটার (সাধারণ) পুরুষ বিভাগে এম সোয়ান এবং মহিলা বিভাগে প্রিয়া আক্তার; ১০ কিলোমিটার (প্রথমবার) অংশগ্রহণকারী পুরুষ বিভাগে মো: তুহিন আল মামুন এবং মহিলা বিভাগে মোসাঃ সুমাইয়া আখতার এবং ১০ কিলোমিটার (ভেটেরান) পুরুষ বিভাগে জসিম উদ্দিন আহমেদ এবং মহিলা বিভাগে ইরি লি কৈকি প্রথম স্থান অর্জন করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে