ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের ‘আশ্বাস’ পেয়েছে বিএনপি
প্রকাশিতঃ 11:02 pm | February 10, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
রাজনৈতিক সঙ্কট আরও গভীর না করতে দ্রুত সময়ের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবির প্রশ্নে অনড় রয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি মনে করছে, নির্বাচনের অনিশ্চয়তা ও সংস্কার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। এমন আবহের মধ্যেই সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে বৈঠক করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদও ছিলেন এই প্রতিনিধি দলে।
প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করছে বলে তাদের ‘আশ্বস্ত’ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি এবং জনগণের যেটা প্রত্যাশা আছে যে, অতি দ্রুত নির্বাচন এবং একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন তিনি (প্রধান উপদেষ্টা), যার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।’ যদিও বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চেয়ে এলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আগে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সারার ওপর জোর দিচ্ছেন।
একই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাঙামাটি পৌরসভা চত্বরে আয়োজিত ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণসমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘যদি সংস্কারের আগে নির্বাচন দেওয়া হয়, সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ওই নির্বাচন দেশের জনগণ গ্রহণ করবে না। কাজেই তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন, তারপর নির্বাচন দিন।’
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগের কথা জানালেও বিএনপি পুনরায় এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান খোলাসা করেছে। বিএনপি মহাসচিব পুনরায় বলেছেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে একমত হবো না। আগেও বলেছি এখনও বলছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হবে না।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। ইতোমধ্যে এই সরকার ছয় মাস পূর্ণ করলেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি, যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি নানাভাবে এই দাবিতে সরকারের প্রতি চাপ অব্যাহত রেখেছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস গত বিজয় দিবসে বলেছিলেন, সংস্কার কতটা করে ভোটে যাওয়া হবে তার ওপর নির্ভর করে ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। তবে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ৫ ফেব্রুয়ারি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ‘জুলাই সনদ’ হবে, তার বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়।
এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যেটা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক সরকারের যে ট্রান্সজিশন হবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, সেটা অনেক সহজ হয়ে যাবে যদি একটা নির্বাচন হয়।’
বৈঠক শেষে কী বলেছেন মির্জা ফখরুল?
যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা একটি বক্তব্য রাখবেন, বলে ধারণা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টাসহ সেখানে যারা ছিলেন, তারা অতি দ্রুত একটি নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেনও, ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য তারা কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে জাতীয় নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি এবং জনগণও প্রত্যাশা করছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দায় সরকার এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সার্বিক বিষয়ে দলের উদ্বেগের বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা বিএনপির দায়িত্ব। বিএনপি সেই দায়িত্ব পালন করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। কারণ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাহিনীর সামনেই একের পর এক ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট বিপন্ন হয়েছে। ফ্যাসিবাদীরা এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।
‘আমরা যেটা বারবার বলে এসেছি, এ সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের আবারও তাগাদা দিয়েছি’—উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, তাঁরা ন্যূনতম সংস্কারের ক্ষেত্রে আলোচনার পর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন।
প্রশাসনে যাঁরা ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ছিলেন, যাঁরা দেশের সম্পদ লুট করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তাঁরা বিগত ১৫-১৬ বছরে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। এ সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। তারা কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি এসেছে। বিএনপি বলেছে, বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্টে’ যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য সরকার কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছেন (প্রধান উপদেষ্টা)। আমরা আশা করব, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে এবং একটি রোডম্যাপ (রূপরেখা) দেওয়া হবে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কোনোভাবেই একমত হব না। আগে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আগেও পরিষ্কার করে বলেছি।’
কালের আলো/এমএএএমকে