জুনের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাচ্ছেন সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা
প্রকাশিতঃ 7:28 pm | February 11, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
আগামী জুন মাসের মধ্যেই সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা পাসপোর্ট পাচ্ছেন। বিশেষ ক্যাটাগরিতে তাদের এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।
সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এরই মধ্যেই ২৫ হাজার ৬৫১ জনের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। পাসপোর্ট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দও চাওয়া হয়েছে।
তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছেঅনেক কম। ফলে সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১৯৭৫ সালের পর থেকে কয়েক ধাপে সৌদি আরবে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেন। এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে গেছেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা সৌদিতে অবস্থানকালে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। সৌদি সরকার বলেছে, এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬৯ হাজার। তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। নবায়ন করতে হবে। গত বছর মে মাসে বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে সম্মত হয়। এজন্য বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতা সই হয়। সে অনুযায়ী উভয়পক্ষ একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। বর্তমানে ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদানে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, আগামী জুন মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ মিশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে এরই মধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৬৫১ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২১ হাজার ১২৬ জন তাদের আবেদন দাখিল করেছেন। তিন ক্যাটাগরিতে প্রাপ্ত আবেদনের মধ্যে ৯ হাজার ৪৮৯ জনের এনরোলমেন্ট (তালিকাভুক্তি) করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, যেসব রোহিঙ্গা পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেছেন, তার মধ্যে ১ হাজার ৭১২ জন তিন ক্যাটাগরির আওতাবহির্ভূত। তারা আবেদনকারীর সন্তান সন্ততি এবং প্রায় সবাই সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেছেন। এদের কারো কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মসনদ নেই। তারা মা-বাবার পাসপোর্টে সংযুক্ত নয়। এছাড়া ৪ হাজার ২৫২ জনের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী মা-বাবার সন্তান হিসেবে স্থানীয় সৌদি জন্মসনদ (শাহাদা মিলাদ) নেই। সে কারণে তাদের পাসপোর্ট প্রদান নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট এনরোলমেন্ট কার্যক্রম শেষ করার জন্য দৈনিক ৫০০ জনের বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের জন্য স্থানীয়ভিত্তিক ন্যূনতম ১৬ জন কর্মচারী এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে একজন উপপরিচালক/সহকারী পরিচালকসহ মোট ১৭ জনবল নিয়োগ করা প্রয়োজন। তবে বর্তমানে ৫ জন স্থানীয়ভিত্তিক কর্মচারী এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের মজুরি বাবদ মোট ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ থেকে মাত্র ২০ লাখ টাকার উপযোজন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে জনবল নিয়োগে অর্থসংকট দেখা দিয়েছে।
সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক শফিকুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়। তারা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী। তাদের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছি। আমরা তাদের ফেরত পাঠাবো না, শুধু আইনি প্রক্রিয়ার জন্য পাসপোর্ট নবায়নের অনুরোধ জানিয়েছি।
প্রক্রিয়া শুরু যখন থেকে
২০১০ সালে সৌদিতে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য প্রথমবারের মতো প্রস্তাব দেয় সৌদি আরব।
এরপর ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করেন সৌদি সরকারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসির বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ। সে সময় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা সই হয়।
এরপর ২০২৪ সালের ১২ মে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল-দাউদের নেতৃত্বাধীন একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। সে সময় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়নে আবারো তাগিদ দেয় সৌদি আরব।
রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদানে সৌদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। সেই ওয়ার্কিং গ্রুপ পাসপোর্ট প্রদানে কাজ করেছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গত ৩ ডিসেম্বর জেদ্দা ও ৪ ডিসেম্বর রিয়াদে বৈঠকও করেছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিককে জানিয়েছেন, ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা পাসপোর্ট পাচ্ছেন।
এই সরকারও পাসপোর্ট প্রদান প্রক্রিয়ার অংশ। কেননা ৩ ও ৪ ডিসেম্বরও বৈঠক হয়েছে।
১৯৭০ সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হিসেবে বাস করতে শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা ছিল আড়াই লাখের বেশি। পরে ২০ হাজার বাদে সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি।
কালের আলো/এএএন/কেএ