বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে কাটছাঁট ৪৯ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিতঃ 10:07 pm | February 11, 2025
![](https://www.kaleralo.com/wp-content/uploads/41-20250211160126.jpg)
কালের আলো রিপোর্ট:
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণ থেকে বাদ যাচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। বাদ দেওয়া হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এই খাতে ৪৮ হাজার ১১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১৫ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হচ্ছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ। শিক্ষা বিভাগ পাচ্ছে ২০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা ও ৩২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগকে। পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ থেকে মিলেছে এসব তথ্য।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয়। মোট এডিপির মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বৈদেশিক ঋণের ১৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে না পারায় এডিপি থেকে তা বাদ দেওয়া হচ্ছে। কাটছাঁটের পর বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮১ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ব্যয় কমছে সরকারি তহবিলেরও।
এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ব্যয় কমে সরকারি তহবিল দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে সরকারি তহবিল থেকেও বাদ যাচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ থেকে মোট ৪৯ হাজার কোটি টাকা বাদ যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক তহবিলের বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। গত ৫০ বছরের মধ্যে বরাদ্দ এতো কমাতে হয়নি কখনো। এমনকি করোনা মহামারির সময়েও কমাতে হয়েছে এর চেয়ে অনেক কম। এ অবস্থার নেপথ্যে রয়েছে প্রধানত পাঁচটি কারণ। এগুলো হলো- আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় না করা, অন্তর্র্বতী সরকারের কড়াকড়ি, অদক্ষতায় সময়মতো কাজ করতে না পারা এবং পুরোনো সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন সেক্টর, মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ ভাগবাঁটোয়ারার কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্পও বাদ দেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। সরকারি তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা। এ বরাদ্দ দিয়ে শীঘ্রই সেক্টর, মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করবে কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) এডিপি বাস্তবায়নেও বিরাজ করছে করুণ দশা। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের এক শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনি। এগুলো হলো স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার এখনো ১০ শতাংশের নিচেই রয়েছে। সার্বিকভাবে এডিপির বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৫৩, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ০৬ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
রেকর্ড পরিমাণে বৈদেশিক ঋণ কাটছাঁট প্রসঙ্গে ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব (ফাবা ও আইসিটি) নূর আহমদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু প্রকল্প বদল হয়েছে। কিছু রিভিজিট করতে হচ্ছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ছিল। এগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই ব্যয় কমছে। রেকর্ড পরিমাণে ব্যয় কমানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, অনেক প্রকল্পে টাকা খরচ হয়নি। আমরা সব কিছু রিভিশন করছি। আমাদের কাছ থেকে বরাদ্দ কম বা বেশি দেওয়ার বিষয় না। যাদের প্রকল্প তারাই খরচ করতে পারেনি। এই কারণেই মূলত বরাদ্দ কমছে।
কালের আলো/এমএসএকে/এমকে