তবুও মাঠ ছাড়তে নারাজ বিএনপি
প্রকাশিতঃ 5:24 pm | February 12, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল বিএনপির প্রতিনিধি দল। সরকারপ্রধানের আশ্বাসে তারা অনেকটা আশ্বস্ত। তবে এরপরও সরকারকে চাপে রাখতে মাঠ ছাড়তে নারাজ দলটি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দলটি জেলায় জেলায় সমাবেশ শুরু করেছে। ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ছয় জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের অন্যান্য জেলায়ও হবে সমাবেশ।
বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কারগুলো করছে এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সময় অনুযায়ী সংস্কার হয়ে থাকে। অভ্যুত্থানের দুই বছর পূর্বেই তারা রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা দিয়েছেন। ওই সংস্কারের মাধ্যমেই দেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করা সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলছে, তার সবই ওই ৩১ দফাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব।
বিএনপি নেতারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। সরকার ও জনগণও তা-ই চায়। তবে এটি নস্যাতে ষড়যন্ত্রও আছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে আজ থেকে ৬৭ সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ করবে দলটি।
সরকারপ্রধান ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, জেলা সমাবেশগুলোতে তিনটি ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এগুলো হচ্ছে- দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃঙ্খলা পরস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং ন্যূনতম সংস্কার শেষে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এছাড়া হাসিনাসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের সকলের বিচার নিশ্চিত করা, এখনো ফ্যাসিস্ট সরকারের যেসব দোসর বহাল তবিয়তে আছে তাদের বিতাড়ন করে বিচারের সম্মুখীন করা, বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহারসহ অন্যান্য ইস্যুগুলোও থাকছে।
জানা গেছে, রমজান শুরুর আগেই বিএনপির দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি সম্পন্ন করা হবে। রমজানে মধ্যে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না, তবে ওই সময় ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি তুলে ধরা হবে। আর এ সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে রমজানের পর রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তখন দেশব্যাপী বিভাগ ও মহানগরে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘সংস্কারের নামে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হলে দেশ আরও গভীর সংকটে পড়ে যাবে। অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। দেশের মানুষ গত ১৭ বছর ধরে ভোট দিতে পারছেন না। তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবে এ সরকারকে কেউ যেন ব্যর্থ করতে না পারে, সে বিষয়েও আমরা সতর্ক আছি। কারণ এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি মানুষের ভোটাধিকারের জন্যই তো দেড় যুগ ধরে আন্দোলন করেছে। কর্মীরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। আমরা আন্দোলন করেছি সংসদ নির্বাচনের জন্য আর কেউ কেউ চাচ্ছেন স্থানীয় নির্বাচন। তারা জানেন না এখন গর্তে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা স্থানীয় নির্বাচনের ফাঁকফোকর দিয়ে মাথা বের করবে। এটা অশুভ চক্রান্ত।’
কালের আলো/এমএএইচইউ