ইউএসএইডের সহায়তা স্থগিতে ৫০টি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত : ডব্লিউএইচও

প্রকাশিতঃ 10:47 am | February 13, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে এত দিন উন্নয়নের জন্য যে আর্থিক সাহায্য দিত যুক্তরা‌ষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড, সম্প্রতি তা স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আর এতে করে ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই তথ্য জানিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সহায়তা স্থগিত করার কারণে এইচআইভি, পোলিও, এমপক্স এবং বার্ড ফ্লু মোকাবিলায় চলমান নানা কর্মসূচি প্রভাবিত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার যুক্তি, এই সংস্থার ব্যয় “সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যাতীত”।

এমন অবস্থায় ডব্লিউএইচও প্রধান ড. টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস অন্য কোনও সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনকে সাহায্য তহবিল পুনরায় চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ৫০টি দেশে এইচআইভি চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা ব্যাহত হয়েছে।

জেনেভায় ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে প্রথমবারের মতো মার্কিন সাহায্য তহবিল স্থগিত করার বিষয়ে সর্বজনীনভাবে কথা বলতে গিয়ে ড. টেড্রোস বলেন: “মার্কিন সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে… যা আমরা উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।”

তিনি বলেন, ৫০ টি দেশে এইচআইভি চিকিৎসা, পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধ পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানান, “ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রোগের বিস্তার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং সেইসাথে সহায়তা স্থগিত ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে কমানোর ফলে ভ্যাকসিন এবং নতুন চিকিৎসার বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে।

অবশ্য এই সিদ্ধান্তের পেছনে ট্রাম্পের যুক্তি, ইউএসএইড “অযোগ্য এবং দুর্নীতিগ্রস্ত”। তিনি সম্প্রতি এই সংস্তাটির ১০ হাজারের শক্তিশালী কর্মী বাহিনীতে বিশাল কাটছাঁট ঘোষণা করেছেন এবং সংস্থাটির প্রায় সমস্ত সহায়তা কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি ইসরায়েল এবং মিসর ছাড়া বিশ্বের সব দেশের জন্যই আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেয় ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সেসময় জানান, নতুন করে সাহায্যের বিষয়গুলো অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত এই সাহায্য দেওয়া যাবে না। আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে বিদেশে সহায়তার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। আর এরপরই এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে ট্রাম্প সরকার।

অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি গ্রহণ করা হবে। আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সেই নীতির অধীনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্পের প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।

কালের আলো/এসএকে