৮ বছর পর নাফ নদে মাছ ধরার অনুমতি, উচ্ছ্বসিত জেলেরা

প্রকাশিতঃ 9:26 pm | February 13, 2025

টেকনাফ প্রতিবেদক, কালের আলো:

মাদকের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে বন্ধ করে দেওয়া নাফ নদে মাছ শিকারের জন্য পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ ৮ বছর পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নাফ নদের বাংলাদেশ অংশে জেলেদের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলো প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের নির্দেশনায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নাফ নদে জেলেদের মাছ শিকার করতে খুলে দেওয়া হয়েছে। আপাতত তিন মাসের জন্য নাফ নদে মাছ ধরতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

চিঠিতে বলা হয়, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে জারি করা রুলে টেকনাফের নাফ নদে জেলেদের বৈধভাবে মাছ ধরা কার্যক্রম চালু করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে নাফ নদে মাছ ধরার অনুমতি প্রদান করা হলো।

মানতে হবে পাঁচ শর্ত

১. সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানা অভ্যন্তরে নাফ নদে (শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত) মাছ ধরতে পারবে।

২. জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবির ৫টি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাবে এবং মাছ ধরা শেষে ফেরত আসার পর বিজিবির পোস্টে তল্লাশি করার ব্যাপারে বিজিবি সদস্যকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। কোনও জেলে চেকপোস্ট এড়িয়ে মাছ ধরতে পারবে না।

৩. কোনোক্রমে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।

৪. মৎস্য অধিদপ্তরে হালনাগাদকৃত নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদান করা যেতে পারে। যাতে কোনোক্রমে নিবন্ধিত জেলে ব্যতীত কেউ নাফ নদে মাছ ধরতে না পারে।

৫. এই অনুমোদন সাময়িক। তিন মাস পর সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ অনুমতি নবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, দীর্ঘ ৮ বছর পর নাফ নদ খুলে দেওয়ায় খুশির জোয়ার বইছে টেকনাফের জেলেদের মাঝে। এ বিষয়ে জেলে সৈয়দ আলম বলেন, ‘২০ বছর ধরে নাফ নদে মাছ শিকার করে আসছিলাম। কিন্তু ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামায় সে সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি মাদক ঠেকাতে নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আমাদের জেলেদের খুব কষ্টের জীবন পার করতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে নাফ নদ খুলে দেওয়ায় আমাদের জেলে পরিবারের মাঝে ঈদের আমেজ চলে আসছে। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং মাদক চোরাচালান ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে যেন জেলেরা জড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ অবস্থান আমাদের থাকবে।’

নাফ নদ জেলে সমাজ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ৮ বছর পর সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। জেলেদের মাঝে আজ আনন্দের জোয়ার বইছে। নির্দেশনা অনুযায়ী সকল নিয়ম অনুসরণ করে জেলেরা মাছ শিকারে যাবে। কেউ যাতে আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয় সেদিকে নজর দেওয়া হবে।’

জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জেলেরা দুঃখ-কষ্টে তাদের জীবনযাপন করেছে। তাদের মাঝে আজ স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিডং ও রাসেডং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি মাদক বন্ধে নাফ নদে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করে সরকার। এখন সেটি খুলে দেওয়া হলো আট বছর পর।

কালের আলো/এমডিএইচ