‘সস্তা’ বাজারে ভোগাচ্ছে ভোজ্য তেল

প্রকাশিতঃ 12:04 pm | February 14, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

রাজধানীসহ সারাদেশেই অনেক সস্তা দামেই বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি। দুই মাস আগেও যেখানে আলু ৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে তা এখন ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু সবজি একেবারেই অবিশ্বাস্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি ধনীদের সুপারসপেও কম দামে মিলেছে সবজি। সবজির বাজার সস্তা হলেও সেই সবজি যে সয়াবিন তেল দিয়ে রান্না করতে হবে তা নিয়ে চলছে ভোগান্তি। কয়েক সপ্তাহ ধরেই দোকানগুলোতে ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। খোলা তেল পাওয়া গেলেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলে হচ্ছে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে ভোজ্য তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লম্বা বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা, গোল বেগুন ৪০-৫০ টাকা, ফুলকপি ২৫-৫০ টাকা পিস, একই দামে বাঁধাকপি। শালগম ২০-৩০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টমেটো ২০-৩০, করল্লা ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, মান ও সাইজভেদে লাউ ৩০-৬০ টাকা, শসা ৩০-৪০, মুলা ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গেল সপ্তাহজুড়ে প্রায় একই দামে বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লার বাজার ও ভ্যানে ফেরি করে আরও কম দামে মিলছে এসব সবজি। রাজধানীর বাড্ডা আদর্শ নগরের বউবাজারে ১০০ টাকায় মিলবে। সেখানে এক কেজি আলু ২০ টাকা, এক কেজি বেগুন ৩০ টাকা, এক কেজি শালগম ১০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, ফুলকপি বা বাঁধাকপি ২০ টাকায় মিলছে। যেখানে তিন মাস আগেও এই বাজার করতে ৩০০-৪০০ টাকা গুনতে হত।

কিছুদিন আগেও ২০ টাকার নিচে কোনো শাক পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে এখন ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন শাকের আঁটি। এর মধ্যে পালং শাক ১০-১৫ টাকা, লাল শাক আঁটি ১০ টাকা, ডাটা শাক ১০-১৫ টাকা, লাউ শাক ৩০-৪০, বথুয়া শাক ১৫-২০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে দোকানের তুলনায় ভ্যানে কিংবা ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রত্যেক সবজির দাম ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ-কাাঁচা মরিচও। মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০-৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহেও প্রায় একই দামে বিক্রি হয়েছে। নতুন রসুন বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমেছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়। তবে পুরোনো শুকনা ও আমদানি করা রসুন ২৩০ টাকার উপরেই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও নতুন আদা ১৪০-১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে অস্বস্তি রয়েই গেছে মাছ-মাংসের বাজারে। আবারও ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সোনালি ৩০০-৩৩০ টাকা। গরুর মাংস ৭২০-৭৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে সাইজ ভেদে তেলাপিয়া ২০০-২৩০ ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। যা গেল সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হয়েছে। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা। এছাড়াও ৬০০ টাকার নিচে নেই পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছ। মাছ যত বড় তার দাম ততো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

কম দামে কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারাও। তবে বিপত্তি তেল কিনতে গিয়ে। বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা লিটার। কিছু দোকানে বোতল পাওয়া গেলেও দাম মুছে দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু বাজারে অদ্ভুত চিত্র দেখা গেছে। বোতলজাত তেল মিললেও তা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখছেন। তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই বাজারে তেলের সরবরাহ কম। মাঝে প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো শর্ত দিয়ে তেল সরবরাহ করেছিল। তবে এখন কয়েকটি কোম্পানির অল্পকিছু বোতলজাত তেল বাজারে আছে। তাই তেল নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়।

রমজানের আগে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ানো দেশের ব্যবসায়ীদের ‘ঐতিহ্যগত অভ্যাস’। গত বছরও রোজা শুরুর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ভোজ্য তেলের মূল্য সমন্বয় করে সরকার। এবারও একই ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত নভেম্বরেই বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল। এরপর ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৮ টাকা। তাতে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৮৫, খোলা পাম তেল প্রতি কেজি ১৭৫, বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন ৮৪০ থেকে ৮৫০, ১ লিটার সয়াবিন ১৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এখন রোজার আগে আরেক দফা বাড়তে পারে পণ্যটির দাম।

আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তেলের বাজার স্থিতিশীল হবে এবং বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট কাটবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। দুই দিন আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আপনারা যদি বাজারে দেখেন রমজানের যত পণ্য- খেজুর, ছোলা, ডাল, চিনি; শুধু তেলে একটা সমস্যা বিরাজ করছে। আশা করি আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে তেলের বাজার স্থিতিশীল থেকে নিম্নমুখী হয়ে যাবে এবং সরবরাহের যে ঘাটতি ঘটেছে সেটা দূর হবে।

কালের আলো/এসএকে