উত্তরায় বসন্ত উৎসব বাতিল: যা বলছে নাগরিক কমিটি

প্রকাশিতঃ 8:25 pm | February 14, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাধার মুখে উত্তরায় বসন্ত উৎসব বাতিল হওয়ার পর নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটির উত্তরা জোন। তারা বলছে, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই— জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনও ধরনের অনুষ্ঠান বাতিলের ক্ষমতা রাখে না এবং এ ধরনের ক্ষমতা ব্যবহারের যে সংস্কৃতি রয়েছে তা পুরোপুরি ভাঙতে আমরা বদ্ধপরিকর।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নাগরিক কমিটির উত্তরা জোনের পক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ একটি লিখিত বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠান।

সেখানে বলা হয়, ‘বাধার মুখে বাতিল উত্তরার বসন্ত উৎসব’ নামক শিরোনাম আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, তুরাগ থানার জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান ইমন।

অনুষ্ঠান বন্ধের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংশ্লিষ্টতা নাকচ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সবধরনের নাগরিক সংগঠন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও পড়ে; আমরা তাদের সবধরনের সাহায্য করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। যে সাংস্কৃতিক স্থিরাবস্থা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, সব স্তরের জনগণকে নিয়ে আমরা সেটা আবার গতিশীল করতে চাই। প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা এবং পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশাপাশি উত্তরায় উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত বরণের প্রস্তুতি নিয়েছিল ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ’।

যদিও উত্তরার ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলছেন, যথাযথ নিয়মে অনুমতি নেওয়ার পরও তারা উত্তরার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে পারেননি। উদযাপন পরিষৎ-এর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আবেদন করেছি, তারা আমাদের অনুমতিও দিয়েছে। আমরা বরাদ্দকৃত ভেন্যুর জন্য ভাড়ার টাকাও পরিশোধ করেছি। পুলিশের কাছ থেকেও অনুমতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার কারণে আজকে সেখানে অনুষ্ঠান করতে পারিনি।’

অভিযোগ ওঠে, ইমন রহমান ফরহাদ নামের একজনের নেতৃত্বে ওই উৎসব আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে ইমনকে ফোন করা হলে, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার মুখপাত্র হিসেবে পরিচয় দেন। বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইমন বলেন, ‘এই উৎসব আয়োজনে উত্তরায় তাদের (আয়োজক) যে প্রতিনিধি, তিনি আওয়ামী লীগের দোসর।’ তার নাম চাইলে ইমন বলেন, ‘উনার নামটা জানি না।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির উত্তরা জোনের পক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজের এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আলোচ্য ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি যে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের একদল ছেলে উত্তরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ইমন নামের একজনকে অবহিত করে যে, উত্তরায় বসন্তবরণ উৎসবে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।’

‘পরবর্তী সময়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি উত্তরার দুজন সদস্যকে আমরা আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখে প্রমাণসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে জানাতে বলি। এরপরে এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা আজকে সকালে জানতে পারি, উত্তরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি স্থানীয় প্রতিবাদের কথা জানিয়ে উপ-সচিবের কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি প্রোগ্রামটি স্থগিত করতে বলেন।’

নাগরিক কমিটির বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা আবারও বলতে চাই, ফ্যাসিবাদকে সামাজিকভাবে রোধ করতে হলে সাংস্কৃতিক জাগরণ লাগবে এবং আলোচ্য ট্যাগিং-কাণ্ড কেবল নতুন ফ্যাসিবাদকেই জাগাবে। আমরা পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব নিয়ে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার কাজ করবো।’

কালের আলো/এএএন/কেএ