গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি ছাড়াই শেষ হলো ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা

প্রকাশিতঃ 2:25 pm | February 15, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

মিউনিখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মধ্যে বৈঠক শেষ হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন অর্জনের জন্য কিয়েভের কেন্দ্রীয় খনিজ চুক্তির ঘোষণা ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়েছে এই বৈঠক।

কিয়েভ এর আগে চুক্তির একটি সংশোধিত খসড়া চুক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে জানিয়েছিল। যে চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের বিশাল সম্পদ উন্মুক্ত হতে পারে মার্কিন বিনিয়োগের জন্য।

এদিকে জেলেনস্কি এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমাদের দলগুলো নথি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘ভ্যান্সের সঙ্গে তার বৈঠক ভালোভাবেই শেষ হয়েছে। কিয়েভ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি বাস্তব এবং নিশ্চিত শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।’

ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের দুই সদস্য রয়টার্সকে বলেছেন, ‘কিছু বিষয়ে এখনও কাজ করা বাকি।

কোনটিই তাৎক্ষণিকভাবে এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইউক্রেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য চাপ দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে রাশিয়ার হাত থেকে তাদের রক্ষা করবে, যদি একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়।’

গত সপ্তাহে রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি চুক্তির রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি তার দেশের অসংখ্য খনিজ সম্পদের মানচিত্র প্রদর্শন করেন এবং বলেন, ‘এসব খনিজ সম্পদ ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে যৌথভাবে এগুলোর উন্নয়নের জন্য পারস্পরিকভাবে উপকারি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন।

’ যে খনিজগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইটেনিয়াম, ইউরেনিয়াম, লিথিয়াম ও কিছু খনিজ পদার্থ।
যদিও ট্রাম্প ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে বলেছেন, তিনি কিয়েভের কাছ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিরল খনিজ পদার্থ চান এবং এর পরেই ওয়াশিংটনের সহায়তার বিষয়টি ‘সুরক্ষিত’ করা হবে।

শুক্রবারের বৈঠকের আগে এ বিষয়ে কোনো চুক্তি করা হবে কি না, জানতে চাওয়া হলে ভ্যান্স বলেছিলেন, ‘দেখা যাক।’ গত বুধবার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট কিয়েভ ভ্রমণের সময় ইউক্রেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি খসড়া চুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছিল।

জেলেনস্কি বলেছিলেন, মিউনিখে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইউক্রেন খসড়া চুক্তিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে।
শুক্রবার ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে বেসেন্ট বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা কিয়েভের অর্থনীতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেসরকারীকরণের ‘সর্বোত্তম অনুশীলন’ করবে।

তিনি বলেন, ‘এর একটি অংশ শুরু হবে … ইউক্রেনীয় অর্থনীতিকে আরো বেশি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে। এ ছাড়া মার্কিন করদাতারা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের প্রতিদান যেন পান, তা নিশ্চিত করা।’

একতরফা প্রস্তাব?

মিউনিখে বন্ধ দরজার পিছনে মার্কিন সিনেটরদের একটি দ্বি-দলীয় দলের সঙ্গে ৯০মিনিটের বৈঠক হয়। তবে জেলেনস্কি গত বুধবার উপস্থাপিত মার্কিন প্রস্তাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন পরিচিত তিনটি সূত্র এটি জানিয়েছে।

তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘তিনি (জেলেনস্কি) মনে করেন, তাকে এমন কিছুতে স্বাক্ষর করতে বলা হচ্ছে, যা পড়ে দেখার নেই। চুক্তিটি তিনি গ্রহণ করুন অথবা না করুক, আমি মনে করি এ বিষয়টি তিনি পছন্দ করছেন না।’

জেলেনস্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি খনিজ চুক্তির জন্য তার নিজস্ব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, ‘এটি ইউক্রেনীয় সংবিধান মেনে চলার জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ অন্য দুটি সূত্র বেসেন্টের প্রস্তাবটিকে ‘একতরফা’ বলে চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

বৈঠকের পরে জেলেনস্কি মার্কিন প্রস্তাবকে একতরফা বলে মনে করেন কি না জানতে চাইলে, ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ব্রায়ান শ্যাটজউত্তরে বলেন, ‘আমি মনে করি এটা বলাই ন্যায্য হবে।’ শ্যাটজ বলেছেন, ‘ট্রাম্পের প্রস্তাব জানানো প্রয়োজন। তবে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।’

সূত্র: রয়টার্স।

কালের আলো/এসএকে