ন্যূনতম ঐকমত্যের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশা বিএনপির

প্রকাশিতঃ 11:06 pm | February 15, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন কথা বলেছেন। আমরা আশা করবো, খুব দ্রুত এই সংস্কারের ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে। সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের প্রথম সভায় মিলিত হয়েছিলেন। এবারের সভায় তিনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং সংস্কার করা যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে কথা বলেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সংস্কারের যে প্রতিবেদনগুলো কমিশন জমা দিয়েছে, সেগুলোর ওপর আলাপ-আলোচনা হবে। দলগুলো এসব নিয়ে কথা বলবে কমিশনগুলোর সঙ্গে এবং একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।

৪৭, ৭১ ও ২৪-এর ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা জানিয়েছি: মামুনুল হক

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ‘১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলা উচিত।’ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বৈঠকে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বলে জানান।

মামুনুল হক বলেন, ‘সংস্কারের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ মতামত তুলে ধরবে। আমরা চাই, সংস্কার প্রস্তাবনা ও তার বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরুর আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান হওয়া প্রয়োজন—আগামীর বাংলাদেশের ভিত্তি কী হবে? সংস্কারের মূল দিকনির্দেশনা কী হবে?’

তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। আমরা জোর দিয়ে বলেছি, তা যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়।’ খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘আমরা চাই না ২০২৪-এর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। ৪৭, ৭১ ও ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যেন আগামীর বাংলাদেশ গড়ে ওঠে।’

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২৫ সালের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত।’ তবে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তার দল নির্দিষ্ট কোনও মত দেয়নি বলে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

উপদেষ্টাদের ছদ্মবেশে রাস্তায় বের হওয়ার কথা বলেছি: মঞ্জু

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে একজন উপদেষ্টাকে ছদ্মবেশে রাস্তায় বের হওয়ার কথা বলেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি আপনাদের একজন উপদেষ্টা ছদ্মবেশে রাস্তায় বের হন। ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে পুলিশের পক্ষ থেকে কী সহযোগিতা পাওয়া যায় সেটা আপনারা দেখেন।’ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা বলেছি, জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য আপনাদের (সরকার) উচিত ছিল ভূমিকা নেওয়া। কিন্তু আপনারা সেটা নেননি। গত ১৫-১৬ বছরে আমরা কী সংগ্রাম-আন্দোলন করেছি সেটা যদি আপনারা নাও মানেন কিন্তু জুলাই-আগস্ট মাসে বিএনপির নজরুল ইসলাম খান অ্যারেস্ট হয়েছিলেন, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের অ্যারেস্ট হয়েছিলেন, গণসংহতির জুনায়েদ সাকি আহত হয়েছিলেন, আমরা গুলি খেয়েছি, জেলে গেছি। কিন্তু কই আপনাদের কোনও আলোচনা এই যে যারা জেলে গিয়েছে, আহত হয়েছে তাদের কোনও কিছু ঠাঁই পায় না। তাহলে আপনারা কীভাবে জাতীয় কর্ম তৈরি করছেন? রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কীভাবে চাচ্ছেন?’

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষে আমি বলেছি, আপনারা আমাদের কথাগুলো শুনেন। কিন্তু কতটুকু আমলে নেন সেটা আমরা বুঝতে পারি না। সুতরাং আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের কথাগুলো গুরুত্ব দেবে।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে মঞ্জু বলেন, ‘আমরা আরেকটা বিষয় বলেছি, এই সরকারের সঠিক কর্তৃত্ব এখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে এমন বন্ধুর অবস্থায় নিয়ে কীভাবে নির্বাচন করবেন? আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে করেন। কিন্তু আপনার প্রশাসনিক কর্তৃত্বটা লাগবেই।’

কমিটির মেয়াদের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর শিগগিরই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতে চাই। জাতীয় ঐকমত্য কমিটির মেয়াদ ছয় মাস। তাই এই সময়ের মধ্যেই আমরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই।’ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চলমান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে যে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তারা সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে এবং সরাসরি অংশগ্রহণ করবে। আমরা মনে করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’

সংলাপ দ্রুত সম্পন্ন করার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ হোক। তবে যেহেতু ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন তাদের পাঠানো হয়েছে, তাই পর্যালোচনার জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার কর্মসূচিগুলোকে দ্রুত অগ্রসর করা এবং জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার। যাতে আমরা দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে পারি।’

সংস্কার কমিশনের নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যেই সংলাপ শেষ করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ছয় মাসের মধ্যেই এটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য সময় দিতে হবে। বাস্তবতা হলো, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সংলাপ ও পর্যালোচনার কাজ শুরু করতে।’

কালের আলো/জিকেএম/আরআই