কিশোর গ্যাং চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েছে
প্রকাশিতঃ 9:48 am | February 16, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যাপক ডালপালা মেলে কিশোর গ্যাং। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকটা নিষ্ক্রিয়তার ফাঁকে এই অপরাধ চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্র মতে, ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর। আগের চেয়ে তাদের দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্রও রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে ২৩৭টির মতো কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ১২৭টি গ্রুপ সক্রিয়। সরকার পতনের আগে ঢাকায় এসব গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৮২। এখন ঢাকার প্রতিটি থানা এলাকায় ৫০০ থেকে ১ হাজার সদস্য রয়েছে। আর চট্টগ্রামে ৫৭টি কিশোর গ্যাংয়ে রয়েছে ৩১৬ সদস্য। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, রাজধানীর পাশাপাশি দেশের প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বেড়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা গ্রামীণ জনপদেও ছড়িয়ে পড়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ও সংশোধন প্রক্রিয়া চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এর বাইরে। রাজনৈতিক দলগুলোও এক ধরনের সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সে সুবাদে কিশোর গ্যাং নামে গজিয়ে ওঠা এই সামাজিক বিষফোড়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। অন্যথায় রাজধানীসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে উঠতি বয়সি এসব অপরাধী।
সূত্র জানায়, প্রায় প্রতিদিনই কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপরাধের তথ্য ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আসছে। মাদকের বিস্তার, অর্থলোভ, আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেকে বড় ভাবার প্রবণতা, বেকারত্ব, অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতাসহ বেশ কয়েকটি কারণে বিপথগামী তরুণরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সজাগ রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর অপরাধের ধরন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিশোর অপরাধ কমাতে সামাজিক সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মধ্যে অপরাধের শীর্ষে রয়েছে মোহাম্মদপুরে ডাইল্লা গ্রুপ, এলেক্স গ্রুপ, ইমন গ্রুপ, আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার গ্রুপ, আকাশ গ্রুপ, দ্য কিং অব লও ঠেলা গ্রুপ, ডায়মন্ড গ্রুপ, আই ডোন্ট কেয়ার (আইডিসি), মুরগি গ্রুপ, সাব্বির গ্রুপ, শাওন গ্রুপ, ফিল্ম ঝিরঝির, স্টার বন্ড, গ্রুপ টোয়েন্টি ফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দে গ্রুপ।
উত্তরা এলাকার গ্যাংগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইন স্টার, পাওয়ার বয়েজ, বিল বস, নাইন এম এম বয়েজ, সুজন ফাইটার, ক্যাসল বয়েজ, আলতাফ জিরো, ভাইপার, তুফান। মিরপুর এলাকায়-সুমন গ্যাং, পিচ্চি বাবু, বিহারি রাসেল, বিচ্ছু বাহিনী, সাইফুল গ্যাং, বাবু রাজন, রিপন গ্যাং, সাব্বির গ্যাং, নয়ন গ্যাং এবং মোবারক গ্যাং। ধানমন্ডিতে একে ৪৭, নাইন এম এম ও ফাইভ স্টার বন্ড। বংশালে রয়েছে জুম্মন গ্যাং, তেজগাঁওয়ে মাঈনুদ্দিন গ্যাং, মুগদায় চান জাদু, ডেভিড কিং ফল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভান্ডারি। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, কলতাবাজার, পানিটোলা, লালকুঠি, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজারসহ সদরঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেরদৌস গ্রুপ, সাজু গ্রুপ, সিনিয়র গ্রুপ, জুনিয়র গ্রুপ, টাইগার গ্রুপ, চিতা গ্রুপের সদস্য অপরাধের শীর্ষে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব শিশু-কিশোর বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পারিবারিক, সামাজিক, সাংগঠনিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই শিশু-কিশোরদের অপরাধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম কিশোর গ্যাংয়ের নতুন তালিকা করে অভিযান চালাতে সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরে গত পাঁচ মাসে দফায় দফায় বৈঠক করে তাদের নিয়ন্ত্রণের পথ খোঁজা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারদের এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
কালের আলো/জিকেএম/আরআই