নাগরিক সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 12:54 pm | February 16, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
নাগরিক সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নারী-শিশুদের রক্ষা একটি বিশেষ দায়িত্ব। আর মস্ত বড় দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। কারণ এ বিষয়ে সারা দুনিয়া আমাদের ওপর নজর রাখে। একটা ছোট্ট ঘটনা সারা দুনিয়ায় বিশাল হয়ে যায়। সরকারের দায়িত্ব সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা। আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেছি, দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করেন। দেশের সংবিধান আপনাকে নাগরিক হিসেবে অধিকার দিয়েছে, সেটি সরকারের কাছ থেকে পেতে হবে। কাজেই সরকারের টিমকে এটার নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, সব নাগরিককে আমরা সুরক্ষা দেবো। কে কোন ধর্মের, সেটা বিবেচনায় না নিয়ে নাগরিক হিসেবে আমরা রক্ষা করবো। এই সরকার তারও সরকার, কাজেই আমি সেবা করতে প্রস্তুত। আমরা সামনে যেসব কর্মসূচি নেবো, সেখানে এটি সবচেয়ে ওপরে থাকবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সমসাময়িক বিষয় যেমন বাজার দর, এটি নিয়ে বহু কথা হয়। সেটারও একটা প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা করতে পারি। জেলায় বাজার দর, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিযোগিতা হতে পারে। আনন্দ, কাজ এবং তার স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কৃত করা যেতে পারে যেসব জেলা ছয় মাস ভালো করবে।’
ডিসিদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, ‘নিজের কাজ, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার এটাই সুযোগ। গদবাধা কাজ তো আছেই। কিন্তু তারমধ্যেও ওই সৃজনশীলতা আছে। যত আইন আছে সবার মধ্যেই কাজ করা যায়। জেলার মধ্যে সময় যতটুকু হোক, সেটিকে স্মরণীয় করে রাখা। এটা একটা স্মরণীয় অধ্যায় হতে পারে, যদি আমরা করতে চাই।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ যারা এখানে বসে আছি, তারাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ সরকার। এটা মহাশক্তিধর একটি সমাবেশ। আমরা যা করি, চিন্তা করি, পরিকল্পনা করি, সেটিই সরকার, সরকারের চিন্তা ভাবনা, কর্তব্য। এই মহাশক্তি নিয়ে আমরা কী কাজ করবো, কী কাজের জন্য তৈরি, সফল-বিফল, সেগুলো আজকের সমাবেশের আলোচ্য বিষয়। সেখানে কাউকে স্তুতি দিয়ে সময় নষ্টের সুযোগ নেই। এই স্তুতিবাক্য পরিহারে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিলাম যেকোনও সভায়, স্তুতিবাক্য অগ্রহণযোগ্য জিনিস বলে আমরা গ্রহণ করবো, আমরা চালু করবো।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে যাকিছু করণীয় তার দায়িত্বে আমরা সবাই আছি। যদি সবাই মিলে বাংলাদেশ সরকার হয়ে থাকে তাহলে একটা টিম হতে হবে। এটা টিম ওয়ার্ক, যে যার মতো করলে হয় না। টিম যখন একত্রিত হয় তখন টিমের কী করনীয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। একজনের ভুল কাজে পুরো টিম সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কাজেই আমরা কেউ যেন এমন ভুল কাজ না করি যাতে করে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়, আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানো ব্যাহত হয়।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার গঠনের পর ছয় মাস চলে গেলো। এটা আমাদের প্রথম পর্ব বলছি, আয়োজনে যে সময় লাগে। অনেক ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে আয়োজনের সময়। এখন সেগুলো ঠিকঠাক করে পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত। আমাকে প্রধান অতিথি সম্বোধন করায় একটু কষ্ট পেলাম। মনে হলো এই খেলার মাঠ থেকে আমাকে বাইরে রাখা হলো। হওয়া উচিত ছিল, খেলার ক্যাপ্টেন, কিন্তু আমাকে করলেন অতিথি। আমি অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই না, আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজগুলো আমাদের হাতে মাপা জিনিস। একই জিনিস ঘুরে ফিরে বারবার আসছে। আমার এমন অবস্থায় আছি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্ত বড় ইস্যু হয়ে গেলো। এটাতে আমরা কে কী পরিমাণ অগ্রসর হলাম, কী করনীয়, এক নম্বর বিবেচ্য বিষয় আইন-শৃঙ্খলা। এটাতে আমরা যেন বিফল না হই। কারণ এটাতে আমাদের অর্জন, সফল হতে পারে, বিফল হতে পারে। সেটাতে কী সমন্বয় হতে পারে সেটা নিয়েই আলোচনা হোক। পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসনের কাজ কী, সমন্বয়ের কাজ কী, কিন্তু ‘ওর কারণে এটা হয় না’ এগুলা বলে আমরা পার পাবো না। যেহেতু জেলার দায়িত্ব একজনের ওপর, তার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হয় সবকিছু। কাজেই সমন্বয়ে কী সমস্যা এগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে, যাতে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে না যাই।’
কালের আলো/এএএন/কেএ