বড় দাদা আর মাস্তানমুখী আচরণ বন্ধ করেন, ভারতকে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিতঃ 9:05 pm | February 17, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে তিস্তাপাড়ের ১১ পয়েন্টে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। সকাল থেকে তীব্র রোদের কারণে দুপুরের পর থেকে দলে দলে যোগ দিয়েছেন পাঁচ জেলার মানুষ। তিস্তাপাড়ে জনতার এই সমাবেশে যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির  বক্তব্যে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ভারতকে আগেও বলেছি, এখনো পরিষ্কার করে বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেন। আমাদের সঙ্গে বড় দাদা আর মাস্তানমুখী আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপরে দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে একটি বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, কিন্তু সেই বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে, আর আমার যে পাওনা আছে সেই পাওয়া বুঝিয়ে দেওয়ার সঙ্গে।’

বিশ্ব জনমত গঠনে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি সফল করতে তিস্তা নদীর দুই পারে আশপাশের পাঁচটি জেলার মানুষ এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এ জন্য নীলফামারী থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত ১১টি স্থানে মঞ্চ ও তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে করা হয়েছে মঞ্চ ও থাকার ব্যবস্থা। তিস্তাপাড়ের মানুষ তাদের দাবি আদায় করতে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সকলেই দলে দলে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলে প্রতিটি পয়েন্টে কানায় কানায় ভরে ওঠে। প্রতিটি স্থানে সরাসরি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

  • ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন
  • তিস্তাপাড়ের ১১ পয়েন্টে জড়ো হয়েছে ৫ জেলার মানুষ
  • আজ ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

জানা যায়, ভারতের উত্তর সিকিম থেকে উৎপত্তি হওয়া তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে বাংলাদেশের নীলফামারী হয়ে। মোট ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে বাংলাদেশ অংশে। ১৯৯৮ সালে প্রতিবেশী ভারত তাদের অংশে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রত্যাহার শুরু করে। আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও তিস্তার পানিতে সমান অধিকার পায় না বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হওয়া বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বিপদজ্জনক অবস্থায়।

একদিকে তিস্তার নাব্যতা সংকট ফলে বর্ষায় অল্প পানিতেই বন্যার দেখা দেয়; দুকুল ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে, দুর্ভোগে পড়ে নদীর দুই তীরের অন্তত ২০ লাখ মানুষ। বন্যার পানি কমতে থাকলে শুরু হয় ভয়াবহ ভাঙন। ভাঙনে বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, নানা স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা। প্রতিবছরই ভূমিহীন হয় হাজারও পরিবার। আবার খরায় তিস্তার পানি সংকটে ব্যহত হয় নৌচলাচল ও চাষাবাদ।

ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ও এমন অমানবিক আচরণে মরতে বসেছে এই আন্তর্জাতিক নদীটি। তিস্তায় সর্বশান্ত হওয়া মানুষের দীর্ঘদিনের আর্তনাদ ঘোচাতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসলেও কোনো সরকার তোয়াক্কা করেননি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনের টোপ বারবার প্রতারণা করেছে।

৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শুধু তিস্তা নয়; ৫৪টি নদী আছে যেগুলো ভারত থেকে আমাদের দেশে আসে। সবগুলো নদীর উজানে তারা (ভারত) বাঁধ দিয়েছে। বাঁধ দিয়ে পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ফসল ফলাতে পারে না। এখানের মানুষ জীবন-জীবিকা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের জেলে যারা মাছ ধরেন, তারা মাছ ধরতে পারেন না।

আওয়ামী লীগ ও ভারতের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিটি মানুষকে আজ কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আমরা ১৫ বছর লড়াই করেছি, আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। সকলের লড়াইয়ের মাধ্যমে পালিয়েছে, কোথায়? ওই ভারতে। একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু তাকে দিল্লিতে রাজার হালে বসায় রাখছে। ওইখান থেকে আবার সে বিভিন্ন হুকুম জারি করে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আছে নাকি এ্যালা, পালাইছে। বন্ধুগণ আজকের এই সংগ্রাম বাঁচা মরার সংগ্রাম, এই এলাকার মানুষের সংগ্রাম। এই সংগ্রামকে আমরা কখনো বন্ধ হতে দেব না।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, কথায় কথায় বলেন আপনারা নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ কিন্তু এই জায়গায় থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে যে আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই। আর তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেন। জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান ও বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। অন্যান্যের মধ্যে একই মঞ্চে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও নদীপাড়ের ভুক্তভোগী নুর বকস।

সমাবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

কালের আলো/এমএএইচ/এনএইচ