এবার হোঁচট খেলে দেশের মানুষ আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না : মাহফুজ আলম
প্রকাশিতঃ 7:39 pm | February 18, 2025

কালের আলো ডেস্ক:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দেশের মানুষ বারবার আশাহত হয়েছে। তারা যেন আর আশাহত না হয়। কারণ এবার তারা হোঁচট খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
মঙ্গলবার রাজধানীর প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে প্রামাণ্যচিত্র ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও শহীদ শাকিলের মা বিবি আয়েশা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
মাহফুজ আলম বলেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্রের সংস্কারকাজ এগিয়ে চলছে। আর আমরা যে সময় পাব তার মধ্যে যেন এই কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে পারি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘এক দল, এক দেশ, এক নেতা, এক রাষ্ট্র- এই নীতি ধরে শেখ হাসিনা তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে যে ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি তা দূর করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তিনি তার পিতার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন। ১৯৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত বিরোধীদলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের মতো তিনিও একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছেন। দেশের এক দশকের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার ইতিহাস। শেখ মুজিবের আমলে গুম, হত্যা ও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’
মাহফুজ বলেন, ‘শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনী ও বিজিবিকে রক্ষীবাহিনীতে পরিণত করেছিলেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নৈতিক মনোবল ভেঙে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনীকে কনটামিনেটেড (দূষিত) করে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি জুলাই থেকে আগস্টে তার প্রমাণ রেখে গেছেন। আর এ জন্যই তাকে বাকশাল গঠন করতে হয়নি। প্রশাসনকেই তিনি বাকশাল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।’
উপদেষ্টা আরো বলেন, ফ্যাসিবাদে অবশ্যই দেশের মানুষের বড় অংশের অংশগ্রহণ থাকে। আর এই ফ্যাসিবাদে গুণ্ডাদের পাশাপাশি প্রশাসনও ছিল। শেখ হাসিনা শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তি মানুষকেও দূষিত করে রেখে গেছেন। তাই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে ফ্যাসিবাদ দূর করা সম্ভব নয়।
মাহফুজ বলেন, শেখ হাসিনা তরুণদের বন্দী করে রেখেছিলেন একটি মতাদর্শের মধ্যে। তিনি যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তারাই তার ঘর ভেঙে দিয়েছে। তরুণদের ক্ষোভ-ঘৃণাকে ইতিবাচক দিকে পরিচালিত করতে হবে। অবশিষ্ট ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে সামগ্রিক বিপ্লবে রূপান্তর করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আমরা যা পারিনি, তরুণরা তা পেরেছে। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তরুণদের আরও উজ্জীবিত করা। কারণ, তরুণরাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা যেন আবার বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করতে পারে। তারুণ্যর উৎসব-২০২৫ এর লক্ষ্যও সেটাই।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার মতো ভয়ংকর স্বৈরশাসককে আমরা মোকাবিলা করতে পারিনি। আমাদের তরুণরা পেরেছে। তারাই আগামীর বাংলাদেশকে নির্মাণ করবে। আর এতে আমরা সবাই একীভূত থাকব।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, দেশের তরুণরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ফ্যাসিবাদী সরকারের মোকাবিলা করেছে। আর আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ও দেশের মানুষকে চেপে ধরেছিল। এখানে আমরা যারা দাঁড়িয়ে আছি, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হলে কেউই দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। গুম হয়ে যেতাম।
তিনি বলেন, তরুণদের জাগিয়ে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আনন্দমুখর পরিবেশে তারুণ্যের উৎসব- ২০২৫ উদযাপন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তরুণ নির্মাতাদের উদ্যোগে ৮টি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের নিয়ে চারশ’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পিআইবি ১০ খণ্ড পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করেছে। পরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অন্য অতিথিদের সাথে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধন করেন। সূত্র- বাসস
কালের আলো/এমডিএইচ