রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে একগুচ্ছ উদ্যোগ

প্রকাশিতঃ 11:28 am | February 19, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

রমজান মাসকে সামনে রেখে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডিম, খেজুরসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মূল্য তদারকিতে একগুচ্ছ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সিয়াম সাধনার মাসে যাতে নিত্যপণ্যের বাজার কোনও প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরে নিয়মিত দুটি টিম বাজার মনিটরিং করলেও রমজান উপলক্ষে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে প্রতিদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি টিম বাজার মনিটরিং বা তদারকি করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আব্দুর রহিম। এছাড়া তদারকি টিমের সংখ্যা দ্বিগুণ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এবারের রোজাতেও অস্থির হয়ে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার।

জানা যায়, রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল, গম, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা, খেজুরসহ ১১টি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপত্র খোলায় মার্জিন কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববাজারেও বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম এখন কম। তারপরও চাহিদামতো পণ্য আসছে না। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকলে রয়েছে দাম বাড়ার শঙ্কা। এর ওপর রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লাভের অপচেষ্টা। তবে এবার সম্মিলিত উদ্যোগে এসব অপচেষ্টা রুখে দিতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণাল সূত্র জানায়, ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রমজানকে সামনে রেখে আপাতত ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই টিসিবি এসব পণ্য নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বাজার শুরু করেছে। অনলাইন মার্কেটেও কিছু পণ্য বিক্রি হতে পারে। এ বছর আমদানি প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছর মার্চের শুরু থেকে রোজা শুরু হতে পারে। রমজানে কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বহুদিনের। এ কারণেই প্রতি বছর এই সময়টায় সরকারকে বাড়তি নজরদারি করতে হয়।

টিসিবি জানিয়েছে, নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের ১০টি সংস্থা মাঠে থাকবে। সড়ক ও বাজারে চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও যুক্ত থাকবে। থাকবে র‌্যাব পুলিশের নিয়মিত টহলদারি। বাজার মনিটরিংয়ে কার্যক্রমে যুক্ত থাকবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদফতর এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিএসটিআইয়ের একাধিক টিম।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা মহানগরীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে গঠিত টিমের লিডারদের নিয়ে কর্মশালা করেছেন বাণিজ্য সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আব্দুর রহিম। কর্মশালায় জানানো হয়, নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাঁচাবাজার, মুদি দোকান ও সুপারশপগুলোতে তদারকি কার্যক্রম চলবে।

কর্মশালায় টিম লিডারদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্য সচিব বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার তদারকি টিম নিয়মিতভাবে ঢাকা মহানগর এবং জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় স্পেশাল টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাজার তদারকি করে। এর পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও বাজার তদারকি করে। এতে অবৈধ মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করতে পারে না। রমজানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আরও নিবিড়ভাবে তদারকি করতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরে নিয়মিত দুটি টিম বাজার মনিটরিং করলেও রমজান উপলক্ষে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে প্রতিদিন তিনটি টিম বাজার মনিটরিং বা তদারকি করবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে ছয়টি টিম কাজ করে উল্লেখ করে সচিব মো. আব্দুর রহিম আরও বলেন, আসন্ন রমজানে তদারকিতে থাকবে তাদের দশটি টিম। এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লিফলেট বিতরণ ও স্থানীয় বাজার কমিটির মাধ্যমে মাইকিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘রমজান মাসে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের বাজারে সবধরনের পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তাই দাম দাম বাড়ার কোনও সুযোগ নেই’।

কালের আলো/আরআই/এমকে