তীব্র হচ্ছে গ্যাস সংকট

প্রকাশিতঃ 9:44 am | February 20, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ে গ্যাস না থাকায় চরম ভোগান্তিতে সময় পার করছেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে আবাসিক গ্রাহকেরাই দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছেন। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাস না পাওয়ায় তিতাসের অভিযোগ কেন্দ্রে আসছে একের পর অভিযোগ। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, পুরান ঢাকা, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি, বনশ্রী, খিলগাঁও, বসুন্ধরা এলাকা থেকে বেশি আসছে অভিযোগ। গ্যাস সংকটে ইলেক্ট্রিক কুকার বসিয়ে জরুরি রান্না সারছেন এলাকার বাসিন্দাদের কেউ কেউ। তাদের মধ্যে বাধ্য হয়ে অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস কিনেছেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কখনও ভোরে আবার কখনও গভীর রাতে গ্যাস আসে। তাও তা স্থায়ী হয় ঘণ্টাখানেক। তারা জানান, রাত দেড়টার দিকে অল্প গ্যাস আসে। তাও স্থায়ী হয় এক থেকে দেড় ঘণ্টা। গ্যাস না থাকলেও সময় মতো তাদের গুণতে হয় বিল। সকালে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সময়ে তারা ঠিক মতো খেতে পারছে না। বাইরের খাবার খেয়ে তাদের সন্তানরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

চুলায় গ্যাস পেতে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ বেশিরভাগ গ্রাহকের। তাই তাঁরা রান্নার কাজে বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করেন। এতে তাঁদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদপুরের রিং রোডের শেগুফতা শারমীন বলেন, অফিসে যাওয়ার আগে সকালে ও অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যার পর রান্নার সুযোগ তৈরি হয়। ওই সময় কখনোই গ্যাস থাকে না। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে।

কাদেরবাদ হাউজিং এলাকার বাসিন্দা দীপা রানী দাস বলেন, প্রতি মাসে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হয়। চুলায় গ্যাস আসে রাত ১২টার পর, ভোর ৬টার আগেই আবার চলে যায়। রান্না করার সুযোগ নেই।

কাঁঠালবাগানের রোকন উজ্জামান বলেন, রাতে সবাই ঘুমানোর পর চুলায় গ্যাস আসে, ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। এলপিজি সিলিন্ডার কিনে রান্নার কাজ সারছেন। খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সাদিকুন নাহার বলেন, রাত ১১টা–১২টার দিকে গ্যাস আসে, ভোর ৬টার আগেই চলে যায়। কোনো কোনো দিন আরও আগে যায়। তাই রমজান মাসে ইফতার ও রাতের খাবার তৈরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

তিতাস গ্যাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৯৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের চাহিদা দিয়েছে তিতাস। প্রকৃত চাহিদা আরও বেশি। এখন তারা সরবরাহ পাচ্ছে ১৫৫ কোটি ঘনফুট। রমজান মাসে তাদের সরবরাহ বাড়িয়ে ১৭০ কোটি ঘনফুট করা হতে পারে। তবে বাড়তি গ্যাসের পুরোটাই যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে।

দেশে গ্যাসের উৎপাদন টানা কমছে। আমদানি করেও চাহিদামতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাই রেশনিং করে (এক খাতে কমিয়ে, আরেক খাতে বাড়ানো) পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে বিদ্যুৎ ও শিল্প খাত। এতে আবাসিক খাতের অনেক গ্রাহক দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাসেও ভোগাতে পারে রান্নার চুলা।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ পেলে মোটামুটি চাহিদা মেটানো যায়। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি ঘনফুট। রমজান মাসে এটি বেড়ে ২৮০ থেকে ২৮৫ কোটি ঘনফুট হতে পারে। বিগত বছরে একই সময়ে গ্যাসের সরবরাহ প্রায় একই পরিমাণ ছিল। তবে এবার বিদ্যুৎ খাতে গত বছরের চেয়ে বাড়তি সরবরাহ করা হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ১২০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হবে। বাকি খাতগুলোতে বর্তমানের মতো সরবরাহ থাকবে। এর জন্য রমজান মাসে এলএনজির একটি কার্গো বাড়তি আনা হচ্ছে। এতে আবাসিক খাতে সরবরাহ কিছুটা বাড়তে পারে।

কালের আলো/আরআই/এমকে