‘ছত্রিশ জুলাইয়ের পর গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে’

প্রকাশিতঃ 5:19 pm | February 20, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ছত্রিশ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) পর পুলিশ বাদী হয়ে কোনো মামলা করেনি। এর আগে ৬০ লাখ মানুষকে মামলায় আসামি করা হয়েছে, যার বাদী ছিল পুলিশ। সাড়ে চার হাজার মানুষ বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। বিগত ১৫ বছর ইলিয়াস আলীসহ অনেকেই গুম হয়েছে। কিন্তু ছত্রিশ জুলাইয়ে পর গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে। তবে এখনো আমরা মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে পারিনি।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর একটি হোটেলে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বিগত ১৫ বছর কারা ফ্যাসিজমের পক্ষ নিয়েছেন, কারা এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে আমরা তা দেখছি। আমরা আপনাদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আপনারা এই জায়গায় নতুন করে জুরিসপুডেন্স রচনা করুন। একজন আসামিকে আদালতে পাঠানোর পূর্বে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ উত্থাপন করুন। এফআইআর-এ নাম না থাকতে পারে কিন্তু তাকে কী কারণে গ্রেপ্তার করলেন এবং এর পেছনে অ্যাসিস্টিটা কী, তিনি কীভাবে এই অপরাধে অংশগ্রহণ করেছেন, অর্থের জোগান দিলে কাকে দিয়েছে, টেলিফোন করলে কাকে করেছে, এই বিষয়গুলো থাকলে ন্যায়বিচারের জন্য বিচার বিভাগের কাজ সহজ হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একদিকে যেমন আমরা মানবাধিকারের ঝান্ডা তুলতে ধরতে চাই, আরেকদিকে ফ্যাসিজমের বিচার করতে চাই। কেউ বিদেশে থাকলে মামলায় তার নাম থাকা উচিত না। কিন্তু জুরিপুডেন্স লেখার ক্ষেত্রে নতুন ঘটনাপ্রবাহ আমাদের সামনে আসছে। সম্প্রতি দেখছেন দিল্লিতে বসে (শেখ হাসিনা) কীভাবে অপরাধ আর উসকানি দিচ্ছে। এখন উনাকে আসামি করলে যদি বলা হয় আমি তো দিল্লিতে ছিলাম। অবশ্যই দিল্লিতে ছিলেন। কিন্তু ডিজিটাল ফরেনসিক করলেন এসব এভিডেন্স হিসেবে আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামের ফসল হিসেবে আমরা এসেছি। শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ এদের রক্তের দায় থেকে বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিতে চাই। এই যাত্রায় যদি আমরা ভুল করি, তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।

এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুল রউফ বলেন, অনেক নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে কারাগারে থাকতে হয়েছে। জামিনযোগ্য মামলাতেও জামিন দেওয়া হয়নি নানা উদ্দেশ্যে। কিন্তু এখন আর বিনা বিচারের কেউ যেন কারাগারে না থাকে। দোষী যেই হোক শাস্তি পেতে হবে কিন্তু বিনা দোষে কেউ যেন শাস্তি না পায়।

কর্মশালায় অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পুলিশের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। জনমানুষের সন্তুষ্টির জন্য আমরা বিচার বিভাগ ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করব। ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য পুলিশ ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। অতীতে আমরা যা ভুলত্রুটি করেছি তা চিহ্নিত ও উত্তরণের চেষ্টা করব।

এ সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, পুলিশের কোনো অঙ্গ যদি প্রোপার কাজ না করে তাহলে তার প্রভার অন্যদের ওপর পড়ে। ৫ আগস্টের আগে কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ অতি উৎসাহী হয়ে নানা অপকর্ম করেছে। ৫ আগস্টের পর মামলার হিড়িক পড়ে। তখন মামলায় অনেককে আসামি দেওয়া হয়। তখন কিছু করার ছিল না। বিপুল পরিমাণ আসামির একেকটি মামলায় আমাদের বিচারিক কার্যক্রম প্রয়োগ করতে পারিনি। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নিরীহ কোনো লোককে গ্রেপ্তার না করতে সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের পরিবর্তিত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিচারিক কাজে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য বিচার বিভাগের প্রতি অনুরোধ।

কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোকতার আহমেদ, রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান, ময়মনসিংহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

কালের আলো/এসএকে